
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসনে বেহাত হওয়া ৮১৫ একর জমি উদ্ধার কার্যক্রমে স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে সেনাবাহিনী ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের কর্মকর্তারা।
বুধবার দিনাজপুর ঘোড়ারঘাট উপজেলার প্রতিরক্ষা কলোনি এলাকায় মিলিটারি ফ্যামিলি রিহ্যাবিলিটেশন অফিসার (এমএফআরও) মেজর নাজমুল হায়দার এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
তিনি জানান, ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাজনের পর ভারত থেকে আসা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের (মোহাজের) পুনর্বাসনের জন্য রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও ঠাকুরগাঁও জেলার ৩ হাজার ৫২৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সেই সাথে এমএফআরও কর্তৃক সামরিক কলোনি গঠন, র্যাংক অনুযায়ী প্লট বরাদ্দ করা হয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এমএফআরও এর কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত হলেও পরবর্তীতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘প্রতিরক্ষা কলোনি জমি বরাদ্দ ও রক্ষাণাবেক্ষন কমিটি’ গঠন এবং সেই কমিটির মাধ্যমে এমএফআরও এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে ও পরে মোহাজেরদের স্থান ত্যাগ ও মৃত্যুর কারণে অনেক জায়গা খালি পড়ে থাকায় অবৈধ দখলদাররা দখলসহ জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে অবৈধভাবে জমি ক্রয়-বিক্রয় ও হস্তান্তর করে। এতে করে প্রতিরক্ষা কলোনির জমি মালিকানা ও রেকর্ড সংক্রান্ত জটিলতা বৃদ্ধি পায়।
এদিকে ঘোড়াঘাটের নুরজাহানপুর, খোদাদাতপুর, ওসমানপুর, হায়দারনগর ও আফসারাবাদ কলোনির ৪২৫ একর জমিতে ৭৬ প্লট ৯৯ বছরের লিজে, ১৩৫ একর জমিতে ২৭টি প্লট এক সনা লিজে এমএফআরও-এর মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। এমএফআরও ওই ৫টি কলোনির ১ হাজার ৩৭৫ একর জমির মধ্যে ৮১৫ একর জমির ১৫৯টি প্লটে বর্তমানে অবৈধ দখলদাররা রয়েছে। প্রায় সিংহভাগ বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারে সম্প্রতি আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে এমএফআরও। ইতোমধ্যে কয়েকটি মামলার রায় এমএফআরও-এর পক্ষে আসলে স্বার্থান্বেষী মহল এমএফআরও এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে মেতে ওঠে। সেই সাথে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করে জনগণকে এমএফআরও-এর মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে।
মেজর নাজমুল হায়দার বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তরের কোন সুযোগ নেই। মূলত যারা অবৈধভাবে প্লটগুলো দখল করে রয়েছেন তারাই এমএফআরওকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। অথচ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এমএফআরও এলাকায় জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছে। যদি বৈধ কাগজপত্রধারী আদালতের মাধ্যমে জমি পান, তবে সেখানে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আমরা রায় পাওয়ার পরও অনেক মানবিক আচরণ করে যাচ্ছি। এমএফআরও যে লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণ করে প্লট তৈরি করেছিল, আমরা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। এতে সংক্ষুদ্ধ হওয়ার সুযোগ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ২৫ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক মেজর ফারাবী, ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাওসার জাহান, সরকারী কৌশলী অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন, ঘোড়াঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।