
পর্যটননগরী কক্সবাজার থেকে টেকনাফগামী সড়কে চোখে পড়ে মহাসড়কসংলগ্ন মনোমুগ্ধকর স্থাপনা—ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, উখিয়া। বালুখালি পানবাজার এলাকায় অবস্থিত এই হাসপাতালটি প্রথমে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে সব বয়সী রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণের কাছে হাসপাতালটি পরিচিত ‘ধলা হাসপাতাল’ নামে। দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন ও সামাজিক সংস্থা ‘ফ্রেন্ডশিপ’ এটি পরিচালনা করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হালিমা, বুলবুল আকতার ও হোসনে আরা—যারা এখানে সন্তান জন্ম দিয়েছেন—জানান, স্বাভাবিক প্রসব এখন বিরল এবং সিজারের খরচও অনেক বেশি। কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিরাপদ প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে তারা অত্যন্ত আনন্দিত।
পালংখালীর খালেদা বেগম ও সাফা আহমেদ বলেন, চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি হাসপাতালের ভেতরের পরিচ্ছন্ন ও উন্মুক্ত পরিবেশ রোগীদের মানসিকভাবেও স্বস্তি দেয়।
৩৮ শয্যার এই হাসপাতালে রয়েছে অত্যাধুনিক দুইটি অপারেশন থিয়েটার, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, আধুনিক ল্যাব সুবিধা—যেখানে ডায়াবেটিস, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, রক্ত, মূত্র, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি ও হেপাটাইটিসসহ নানা রোগের পরীক্ষা ও চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতালে ২০ জনের বেশি চিকিৎসক এবং প্রায় ৪০ জন মিডওয়াইফ ও নার্স রোগীদের সেবায় নিয়োজিত। প্রতিমাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫০০-এর বেশি, আর এ পর্যন্ত সেবা পেয়েছেন ৬ হাজার ১৭৭ জন।
ফ্যাসিলিটি ইনচার্জ ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, জরুরি ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে হাসপাতালটি স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের যাত্রী ও পর্যটকদের জন্যও চিকিৎসা সহায়তার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয় উখিয়া ও টেকনাফে। এতে এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং স্বাস্থ্য-স্যানিটেশন ব্যবস্থা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। স্থানীয়রা আশা করছেন, ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল এ অঞ্চলে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।