
কক্সবাজারের মহেশখালীতে ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার পর লাশ গুমের ঘটনায় দায়ের মামলায় মো. সোলেমান নামের এক আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মোহাম্মদ ওসমান গনি এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত সোলেমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। হাজতে নেওয়ার পথে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সোলেমান টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল এলাকার মৃত ছৈয়দ করিমের ছেলে।
নিহত মাহিয়া (৬) মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ সাইরারডেইল এলাকার মোহাম্মদ আতাউল্লাহর মেয়ে। সে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মীর মোশাররফ হোসেন টিটু বলেন, “এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নৃশংস খুনিকে দণ্ডিত করায় ভবিষ্যতে অপরাধীরা আর এমন সাহস করবে না।”
মামলার বাদী ও ভিকটিমের পিতা আতাউল্লাহ জানান, ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর দুপুরে স্কুল থেকে ফেরার পর তার মেয়ে বাড়ির পাশে খেলছিল। এ সময় তাকে অপহরণ করা হয়। পরে ধর্ষণ ও হত্যা করে মৃতদেহ গুম করা হয়। পার্শ্ববর্তী পেকুয়া উপজেলার করিয়ারদিয়া এলাকা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর মহেশখালী থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার পর অবশেষে রায় ঘোষণা হলো।
আদালতের নথি অনুযায়ী, সেদিন কেক ও জুসের প্রলোভন দেখিয়ে সোলেমান শিশুটিকে ঘরে ডেকে নেয়। স্ত্রী বাড়িতে না থাকায় একপর্যায়ে সে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। এতে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে একটি লাগেজে ভরে কক্সবাজারের পেকুয়ার করিয়ারদিয়া বাঁধে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে শিশুটি মারা গেছে। এরপর কাদামাটিতে লাশ পুঁতে রাখে। হত্যার পরও পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে সে ওইদিন রাতে শিশুটির বাবার কাছে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
এ ঘটনায় শিশুর পরিবার প্রথমে থানায় নিখোঁজ জিডি করে। পরে তদন্তে অপহরণের সত্যতা মেলে। পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ১০ ডিসেম্বর সোলেমান ও তার স্ত্রীকে আটক করে। তবে স্ত্রীকে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়। মহেশখালীর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সোলেমান পুরো ঘটনার বিস্তারিত স্বীকার করে।