
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা বাস্তবায়িত হয়নি বলেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এমন সময় একটা রাষ্ট্র পেয়েছি- যেখানে কোনো টাকা ছিলনা। কোনো সিস্টেম নেই। বিগত দিনে দুর্নীতি এমন পর্যায়ে হয়েছে, এতোগুলো স্তর বিশিষ্ট যে আমাদের পক্ষে অল্প সময়ে সবটুকু উৎপাটন করা কঠিন।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি মানুষ যেমন ভালোবেসে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসকে নিয়ে এসেছেন, আবার এটাও তো দেখতে পাচ্ছি যে মানুষ ধৈর্যহীন হয়ে যাচ্ছে। এক বছরেই আমরা যদি ধৈর্যহীন হয়ে যাই, ১৫-১৬ বছরের দুর্নীতি-অনিয়ম কী করে শোধরাব? আগামী দিনগুলো চ্যালেঞ্জিং, সামনে নির্বাচন, নির্বাচন যদি চান শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করুন, রাজনৈতিক দলগুলো মিলে একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারেন, রাজনৈতিক ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে দেশকে গঠন করতে হবে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার মানিকনগরে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ সব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, অর্ন্তবতীকালীন সরকার আকস্মিকভাবে আপনাদের জীবনে নেমে এসেছে। যখন ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে ঢাকার রাস্তায় ঢেউয়ের পরে ঢেউ জনসমুদ্রের মতো, যখন তারা মুক্তির আহ্বানে মেতে উঠেছিল- সেদিন আমার মনে হয়েছিল যেন স্বয়ং ফেরেশতা নেমে এসেছে। এই ঢেউটা আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাবে? একটা জিনিস বুঝেছি সময় পাল্টে গেছে। রাজনীতিকেও পাল্টাতে হবে। আমরা চলে যাব, একটা গভীর আবেদন আমাদেরও থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলো সকল স্তরের, সকল পর্যায়ের মিলেমিশে যেন একটি নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচন উপহার দেয় দেশের মানুষকে।
মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টার একান্ত সচিব তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি হাবিবুর রহমান কামাল, নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান, এনডিসি আবু মোছা, সহকারী পুলিশ সুপার নবীনগর সার্কেল পিয়াস বসাক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) খালেদ বিন মনসুর, নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান, নবীনগর প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন শান্তি।
পরে উপদেষ্টা নাসিরাবাদ ও মানিকনগর গ্রামের নদীভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন। এর আগে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহতেশামুল হক সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, তিনি এই প্রথম তার পৈত্রিক বাপ দাদার ভিটেবাড়িতে আসলেন। শারমিন এস মুরশিদের দাদা আলী আহাম্মদ খান ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন এবং ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগের হয়ে নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর আসন থেকে এমএলএ নির্বাচিত হন। শারমিন এস মুরশিদের মা নুরজাহান মুরশিদ শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন। পরে আদর্শিক কারণে ১৯৭৪ সালে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
তাজউদ্দীনসহ জাতীয় চার নেতা হত্যার পর তিনি রাজনীতি থেকে সরে আসেন। শারমিন এস মুরশিদের পিতা শিক্ষাবিদ ডক্টর সারোয়ার মোর্শেদ খান ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।