
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে কৃষকরা পাট ও পাটকাঠি শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা এখন পাটকাঠি যত্ন করে মজুত করছেন। একসময় পাটকাঠি প্রধানত গ্রামের অসচ্ছল পরিবারের ঘরের বেড়া ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হতো। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে এটি এখন অর্থকরী পণ্য হয়ে উঠেছে।
পানের বরজ, পার্টিকেল বোর্ড ও চারকোল কারখানায় পাটখড়ির ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। ফলে পাটকাঠি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় চাষীরা।
পাটের উপজাত এই পাটখড়ি এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ চুল্লিতে পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে কার্বন বা চারকোল, যা চীনসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। কার্বন ব্যবহার হচ্ছে কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপির কালি, আতশবাজি, ফেসওয়াশ, প্রসাধনী, মোবাইলের ব্যাটারি, দাঁত মাজার ওষুধ এবং খেতের সার তৈরিতে।
উপজেলার কৃষকরা জানান, দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাটকাঠি কিনে নিচ্ছেন এবং ভালো দাম দিচ্ছেন। বর্তমানে একশ আঁটি পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, যেখানে একসময় তা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতো। তাদের মতে, পাট বিক্রিতে উৎপাদন খরচ উঠে আসে, আর পাটকাঠি তাদের প্রকৃত লাভের মুখ দেখাচ্ছে।
চরকাটি হারী এলাকার কৃষক নজরুল ও দ্বীপেশ্বর গ্রামের রাসেল মিয়া বলেন, রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া বা পানের বরজের ছাউনি ছাড়া পাটকাঠির আর কোনো ব্যবহার ছিল না। এখন সেটি বিক্রি করে আয় হচ্ছে। শুনেছি, এটি ছাই করে বিদেশে পাঠানো হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একে এম সাজাহান কবির বলেন, গত এক দশক ধরেই এই জ্বালানির বাজার বাড়ছে। শুধু তাই নয়, দেশে উদীয়মান রপ্তানি পণ্য হিসেবে শিল্পের মর্যাদাও পাচ্ছে পাটকাঠির ছাই। অনেকে পাটকাঠি কেনাবেচাকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছেন, এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পাটকাঠি সংরক্ষণ ও রপ্তানির নতুন বাজার তৈরি করা সম্ভব। এতে দেশের পাটশিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারে।