ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাপ-দাদার পেশায় আঁকড়ে কষ্টে চলছে কালামের জীবন

বাপ-দাদার পেশায় আঁকড়ে কষ্টে চলছে কালামের জীবন

মো. আবুল কালাম। বয়স ৬২ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু দারিদ্রতার কষাঘাতে দেহে বার্ধক্যের ছাপ। সেই দশ বছর বয়স থেকেই বাবার হাত ধরে গ্রামে গ্রামে শিল-পাটার ধারের কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এ কাজ করছেন তিনি। তার পূর্বপুরুষেরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে শিল-পাটায় ধারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তার মতো এই গ্রামের অনেকেই এ পেশায় জড়িত ছিলেন।

আধুনিক সভ্যতায় মেশিনে তৈরি রান্নার উপকরণ (হলুদ, মরিচ, জিরা) বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় এখন মহিলাদের শিল-পাটায় বেটে রান্না করার প্রয়োজন নেই। ফলে শিল-পাটার চাহিদা কমে গেছে। গ্রামের অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে আবুল কালাম বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে এখনো পরিবার-পরিজনের তাগিদে শিল-পাটা ধারের কাজ করে দিন কাটাচ্ছেন।

তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের চৌদার গ্রামে। পিতা রইচ উদ্দিন। এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে। ভোরে শিলপাটা ধারের যন্ত্রপাতি কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে যান। শহরের অলিগলি কিংবা গ্রামের মেঠোপথে পায়ে হেঁটে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটে চলেন। গ্রামের বাড়ি বা শহরের বাসার সামনে গিয়ে ডাকতে থাকেন, ‘লাগবে শিল-পাটা ধার!’ প্রতিদিন ৮–১০ মাইল পায়ে হেঁটে কাজের সন্ধানে চলেন।

যেসব মহিলাদের শিল-পাটা ধারের প্রয়োজন, তারাই তার ডাকে সাড়া দেন। প্রতিটি শিল-পাটা ধার দিতে ৪০–৫০ টাকা নেয়। দিনশেষে ৩০০–৪০০ টাকা উপার্জন হয়, যা দিয়ে বাজার থেকে প্রয়োজনীয় খাবার ও তরিতরকারি নিয়ে বাড়ি ফিরেন। স্ত্রীর স্বপ্ন বা সন্তানের চাওয়া পূরণ করতে পারেননি, তবু মুখে হাসি ফোটে।

মুগ্ধ হওয়ার মত এই ধার কাটনেওয়ালার হাতে নিপুন কাজ। পাটা ও নোড়াতে বাটাল-ছেনি দিয়ে ছোট হাতুড়ির সাহায্যে ধার কাটতে দেখলে শিশুরা ঘিরে ধরে। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে পাটার পাথর খোদাই করে তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যে সাড়া পাটার গা মাছের আঁশের মত রূপ ধারণ করে। শ্রমের সাথে শিল্পের সংমিশ্রণ বাঙালি মানসে প্রোথিত। গৃহস্থের ইচ্ছা অনুযায়ী পাটাতে ধার কেটে মাছ, ফুল, লতা ও পাখির ছবি ফুটিয়ে তোলেন।

আবুল কালাম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে বাপ-দাদার পেশায় আছি। বহু কষ্টে দিন কাটলেও অন্য পেশা আমার ভালো লাগে না। জীবনের শেষ অব্দি এই পেশায় থেকে জীবিকা নির্বাহ করতে চাই।’

কালের গতি আমাদের ঐতিহ্যকে যাদুঘরে পাঠিয়েছে। বিকল্প হিসেবে মেশিনে ভাঙা মশলা এসেছে। তবে ভোজনরসিক বাঙালিদের মধ্যে এখনও হাতে বাটা মশলার ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ। হাতে বাটা মশলায় তৈরি খাবারকে অনেকেই পছন্দ করেন। এখনো টিকে আছে হাতে বাটা মশলা তৈরির শিল-পাটা।

কালামের জীবন,বাপ-দাদার পেশা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত