ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

১৭৩৭ কোটিতে নির্মিত রেলপথে একটি ট্রেন, মাসে আয় মাত্র ১৫ লাখ টাকা

১৭৩৭ কোটিতে নির্মিত রেলপথে একটি ট্রেন, মাসে আয় মাত্র ১৫ লাখ টাকা

সরকারি অর্থে নির্মিত ঈশ্বরদী–পাবনা–ঢালারচর রেলপথ এখন আর্থিকভাবে অকার্যকর প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন লাইন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর একনেক সভায় অনুমোদন পায়। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৮৩ কোটি টাকা। তবে একাধিকবার মেয়াদ ও ব্যয় সংশোধন করে অবশেষে ৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেলপথ নির্মাণে খরচ হয় ১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা।

২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর ২০২০ সালে এ পথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তখন থেকে এক জোড়া ট্রেন চললেও বর্তমানে চলাচল করছে মাত্র একটি ট্রেন—ঢালারচর এক্সপ্রেস।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঈশ্বরদী–ঢালারচর রেলপথের ১১টি স্টেশন থেকে আয় হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে আয় হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। অথচ রেলপথ ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মীদের বেতন-ভাতা এবং ট্রেনের জ্বালানি খরচ মিলিয়ে প্রকল্পটি লোকসানেই চলছে।

রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী, এ রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য জনবল সংস্থান রাখা হয়েছে ১ হাজার ১২১ জনের। তাদের বার্ষিক বেতন-ভাতা বাবদ প্রয়োজন হয় ৬৬ কোটি টাকা, অর্থাৎ মাসে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। তবে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৬৫ জন, যার মধ্যে তিনজন স্টেশনমাস্টার, তিনজন পয়েন্টসম্যান, ৩০ জন গেটম্যান ও ১৫ জন পোর্টার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্প গ্রহণের সময় বলা হয়েছিল প্রতিদিন ১০টি ট্রেন চলবে। কিন্তু ছয় বছর পার হলেও চলছে মাত্র একটি ট্রেন। এর জ্বালানি ব্যয় ও রানিং স্টাফদের বেতন-ভাতা বাবদ রাজস্বের বড় অংশ খরচ হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রকল্পটি দেশের অর্থনীতিতে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে না, শুধু স্থানীয়দের সীমিত যোগাযোগ সুবিধা দিয়েছে।

সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, প্রকল্পটি ঢালারচরে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এর আর্থিক সম্ভাব্যতা বা সুফল যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ না হয়, সে জন্য আমরা ইন্টিগ্রেটেড মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছি।

তিনি আরও বলেন, ‘কোথায় সড়ক, কোথায় রেল বা কোথায় নৌপথ প্রয়োজন—সে বিষয়গুলো মহাপরিকল্পনায় উল্লেখ থাকবে। ভবিষ্যতে প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে এই পরিকল্পনা অনুসরণ করলে ঈশ্বরদী–ঢালারচর রেলপথের মতো প্রকল্প আর হবে না।’

মাত্র ১৫ লাখ টাকা,মাসে আয়,একটি ট্রেন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত