
নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি ও মুক্তিপণের নাটকে মূল চরিত্র হিসেবে উদঘাটিত হয়েছে আলোচিত নিখোঁজ শ্রমিক ছাইদুল ইসলাম ওরফে সাইফুল (২৫)। পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, একটি বড় দালাল সিন্ডিকেটের অংশ হয়ে পরিকল্পিতভাবে তিনি নিজেই আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলন উসকে দিয়ে সুযোগ নেওয়া ও অর্থ আত্মসাৎ করা।
গত ১২ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় নিজ বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ হন সাইফুল। তার পিতা নীলফামারী সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। নিখোঁজের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে উত্তরা ইপিজেড এলাকায় শুরু হয় নানা গুঞ্জন ও উত্তেজনা।
তবে পুলিশি তদন্তের একপর্যায়ে বেরিয়ে আসে ভিন্ন চিত্র। ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে সৈয়দপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি স্বীকার করেন, ইপিজেডে অস্থিরতা সৃষ্টি ও এক সিন্ডিকেটের হয়ে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যেই তিনি আত্মগোপনে যান।
রোববার বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এ বি এম ফয়জুল ইসলাম জানান, সাইফুল স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গিয়ে নিজেই এভারগ্রিন কোম্পানির কর্মকর্তাদের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করেন এবং ইতিমধ্যে ৫ হাজার টাকা আদায়ও করেন, যা তিনি স্বীকার করেছেন।
পুলিশ বলছে, ছাইদুল কোনো একক নাটকের চরিত্র নয়, বরং একটি সুসংগঠিত দালাল সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। এ সিন্ডিকেট শ্রমিক অসন্তোষকে পুঁজি করে ইপিজেডে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে ফায়দা লোটার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
এ ঘটনায় ছাইদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের চিহ্নিত করে দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, ২ সেপ্টেম্বর উত্তরা ইপিজেডে এভারগ্রিন কোম্পানির শ্রমিক অসন্তোষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ছাইদুল। তখন থেকেই তিনি শ্রমিকদের উসকে দেওয়ার পেছনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছিলেন।
ইপিজেডে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ নজরদারি জোরদার করেছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ফারুক আহমেদ, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এম আর সাঈদ, নীলফামারী জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুর আলম, জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আল-আমিনসহ নীলফামারী জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা।