
গ্রামাঞ্চলে বাড়ির উঠোনে কিংবা ঘরের সিঁড়িতে বসে মহিলারা দলবেঁধে মাথার চুল থেকে উকুন ধরার দৃশ্য এখন সচরাচর চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তন এবং সম্প্রীতির ঘাটতির কারণে মহিলারা এখন আর দলবেঁধে কোনো সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত থাকে না। অত্যাধিক মোবাইল ব্যবহার, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের আসক্তি, যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একান্নভুক্ত পরিবারের কারণে এখন মহিলারাও সচরাচর একসাথে সমবেত হয় না।
মহিলাদের একজন আরেকজনের মাথা থেকে উকুন ধরার দৃশ্য নতুন প্রজন্মের কাছে অচেনা ও অজানা। গ্রামবাংলার প্রাচীনতম সম্প্রীতির বন্ধন আজ হারিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক ও যান্ত্রিকতার যুগে মানুষ নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখায় সম্প্রীতির ঘাটতি ঘটেছে বলে জানান সমাজবিজ্ঞানীরা।
মাথায় উকুন হওয়া আমাদের দেশে পরিচিত ও বিব্রতকর সমস্যা। এই পরজীবী সাধারণত মানবদেহের তিনটি জায়গায় সংক্রমণ করে, যার মধ্যে মাথার চুলে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটে। এছাড়া শরীর এবং পিউবিক হেয়ার বা গুপ্তলোমেও সংক্রমণ হতে পারে। নারীদের চুলে উকুনের সংক্রমণ পুরুষদের তুলনায় বেশি দেখা যায়। কিশোরীদের মধ্যে উকুন বেশি হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ৩ থেকে ১২ বছর বয়সে উকুন বেশি দেখা যায়।
উকুন উড়তে বা লাফ দিতে পারে না। সাধারণত একজনের মাথা বা শরীর থেকে সরাসরি অন্যজনের মাথা বা শরীরে চলে যেতে পারে। এছাড়া ব্যবহৃত চিরুনি, ব্রাশ, বালিশ, চুলের ফিতা, রাবার ব্যান্ড, বিছানার চাদর, গামছা, তোয়ালে ইত্যাদির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
ঘরোয়া চিকিৎসা: উকুন দূর করার ক্ষেত্রে অনেক সময় পেট্রোলিয়াম জেলি, মেয়োনিজ, টি-ট্রি অয়েল, রসুন, নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বাড়িতে ব্যবহার করা যায়। তবে সব সময় এ থেকে ভালো ফল পাওয়া যায় না।
প্রতিরোধ: নিয়মিত চিরুনি দিয়ে মাথা ভালোভাবে আঁচড়ানো। প্রতিবার আঁচড়ানোর আগে মাথা ভালোভাবে তেল বা পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে। কাপড়চোপড়, বালিশ, তোয়ালে, বিছানার চাদর গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে। সম্ভব হলে ইস্ত্রী করতে হবে। যেসব কাপড় ধোয়া যায় না (নন-ওয়াশেবল), তা ড্রাইওয়াশ করা বা প্লাস্টিকের ব্যাগে সিল করে শুষ্ক জায়গায় দুই সপ্তাহের জন্য রেখে দিতে হবে। ব্যবহৃত চিরুনি, ব্রাশ গরম পানিতে ৫ থেকে ১০ মিনিট ভিজিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
উকুন নির্মূলের জন্য পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নেওয়া এবং সঠিক নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
এখনও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের অনেক পরিবারে দেখা যায় মহিলাদের মধ্যে সম্প্রীতি বিরাজ করছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাফসীনা জানান, আমাদের বাড়িতে মা-চাচীরা এখনো সবাই মিলে একসাথে দলবেঁধে মাথার উকুন ধরেন। উকুন ধরতে গিয়ে একে অপরের মাঝে সাংসারিক এবং বিনোদনের আলাপচারিতা হয়।
স্থানীয় মহিলা ডিগ্রি কলেজের সমাজকর্ম বিষয়ক সহকারী অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, গ্রামাঞ্চল কিংবা শহরেও যৌথ পরিবার ভেঙ্গে খণ্ড খণ্ড হয়ে যাচ্ছে। ফলে পারিবারিক সম্প্রীতির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মোবাইল ও টেলিভিশনের অত্যাধিক আসক্তির কারণে এখন উকুন ধরার দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়ে না।