ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বৌদ্ধ বিহারে হামলা: ফিরেছে সম্প্রীতি, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয়

১৮ মামলার মধ্যে ১টির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিল পিবিআই
বৌদ্ধ বিহারে হামলা: ফিরেছে সম্প্রীতি, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয়

কক্সবাজারের রামু সদরের চৌমুহনী স্টেশন থেকে চেরাংঘাটের রাস্তা ধরে ২৫০ মিটার মতো এগোলেই দুটি দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহার যে কারও চোখ আটকে যায়। ছোট-বড় বৃক্ষে আচ্ছাদিত অনন্য নির্মাণ শৈলীর প্রাচীন বিহার। ভেতরে আছে ঐতিহাসিক বৌদ্ধ পুরাকীর্তি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। একটির নাম লালচিং, অপরটি সাদাচিং। এই দুই বিহার দেখে ১৩ বছর আগে এখানে ঠিক কী ঘটেছিল তা বোঝার সুযোগ নেই। শুধু এই বিহার নয়, আশপাশের রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার, উত্তর মিঠাছড়ি ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের সিংহশয্যাসহ অন্যান্য বৌদ্ধ বিহারগুলোও সব নতুন। এখন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রার্থনার পাশাপাশি সেখানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। শত বছরের কাঠের তৈরি বিহারগুলো এখন ইট-সুরকি দিয়ে শক্তপোক্ত ও কারুকাজে বানানো হয়েছে।

১৩ বছর আগে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে বৌদ্ধ বিহার ও বাড়িঘরে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। এদিন রাতে রামু উপজেলার ১২ টি বৌদ্ধ বিহার ও ৩০টি বসতঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরদিন উখিয়া, টেকনাফ ও সদরে আরও ৭টি বিহারে হামলা চালানো হয়। এতে বিহারের কয়েক শত বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও পুরাকীর্তি ধ্বংস করা হয়। দেশব্যাপী আলোচিত এ ঘটনায় রামু, কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফে পুলিশ বাদী হয়ে ১৯টি মামলা দায়ের করে। একটি মামলা সে সময় প্রত্যাহার করে নেন বাদী। মামলায় ১৫ হাজার ১৮২ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ ১৮ টি মামলায় ৯৯৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে আদালত উখিয়ার একটি মামলা পুনঃতদন্তের জন্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেন।

গতকাল রোববার পিবিআই কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মতিয়ার রহমান জানান, গত মাসের ১৭ আগস্ট আদালতে এ মামলার ইতি টেনে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এর আগে মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে প্রত্যাহার করা হয়। মামলাটি তদন্তে গিয়ে কোনো সাক্ষীও পাননি বলে জানান তিনি। থমকে আছে ১৭টি মামলার বিচার কার্যক্রম। মামলার অভিযোগ গঠন হলেও ১৭টি মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত তিন বছরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসূলি (পিপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা তিন সরকারি কৌঁসূলি বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এসব মামলার সাক্ষীদের নোটিশ দিয়েও আদালতে আনা যায়নি। মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে বর্তমান পিপি সিরাজুল ইসলাম জানান, কয়েকটি নিম্ন আদালতে মামলাগুলো বিচারাধীন রয়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মী সুনীল বড়ুয়া জানান, ১৩ বছরে ফিরেছে সম্প্রীতি। তবে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয়-ধোঁয়াশা কাটছেনা।

তিনি বলেন, হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী ছিল পুলিশ। তাঁরা খেয়াল-খুশি মতো আসামি করেছে। ফলে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে মামলার পুনঃতদন্ত দাবি করেছেন তিনি। ভবিষ্যতে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধে রামুর বৌদ্ধ বিহারগুলোতে সরকারের নিরাপত্তা বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ শীলপ্রিয় মহাথের।

তিনি বলেন,‘নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে সাক্ষীরা আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন না। সেই দিনের ভিডিও ফুটেজ দেখেই তো অপরাধীর শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা যায়।

এ দিকে দিনটিকে স্মরণ করে আজ রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ, বুডিস্ট সোশ্যাল মুভমেন্টসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে - বুদ্ধপূজা, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, চিত্র প্রদর্শনী, অষ্টপরিস্কারসহ মহাসংঘদান, ধর্মালোচনা সভা, শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন, অতিথি ভোজন, প্রদীপ প্রজ্বলন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা।

স্মরণ সভায় দেশবরেণ্য পন্ডিত, প্রাজ্ঞ বৌদ্ধ ভিক্ষু ও নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন বলে জানিয়েছেন স্মরণসভা উদযাপন পরিষদ।

বৌদ্ধ বিহার,হামলা,বিচার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত