
চুয়াডাঙ্গায় আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে বিজয়া দশমী। শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিনে দেবী দুর্গাকে চোখের জলে বিদায় জানাবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বিকেল ৩টা থেকে শহরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে প্রতিমা নিয়ে বের হবে শোভাযাত্রা। ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে শোভাযাত্রাগুলো শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মাথাভাঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এ বছর দেবীর আগমন ঘটেছিল হাতিতে, আর বিদায় হবে দোলায় চড়ে। চুয়াডাঙ্গার ১১৩টি পূজামণ্ডপকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যেই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিমা বিসর্জন নির্বিঘ্নে শেষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিসর্জনের পুরো সময় পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা টহলে থাকবে এবং নদীর ঘাটে বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
গতকাল বুধবার পালিত হয়েছে মহানবমী। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ছিল ভক্তদের ভিড়। চণ্ডীপাঠ, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও হোমযজ্ঞে অংশ নিয়ে ভক্তরা সৃষ্টি করেন ভক্তিময় আবহ। ধূপ-ধুনোর গন্ধ, ঢাকের তালে তালে মণ্ডপগুলোতে এক অনন্য পরিবেশ তৈরি হয়। এদিন সন্ধি পূজা ছিল বিশেষ আকর্ষণ। মহাঅষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডারূপ স্মরণে জ্বালানো হয় ১০৮ প্রদীপ। জেলার বড় বাজার সার্বজনীন মন্দির ও দৌলাতদিয়ার দক্ষিণ পাড়া বারোয়ারী দুর্গা মন্দিরে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে স্থানীয় শিল্পীদের নৃত্য ও সংগীত দর্শকদের মন জয় করে নেয়।
আজ ভোরে দশমী বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়েছে। পূজার অন্যতম অনুষঙ্গ সিঁদুর খেলা অনুষ্ঠিত হবে দুপুরে। বিবাহিত নারীরা দেবীর কপালে সিঁদুর দিয়ে একে অপরের মঙ্গল কামনায় সিঁদুর পরাবেন। পরে শুরু হবে বিজয়া মিলনমেলা। শিশু-কিশোররা বড়দের প্রণাম করবে, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় হবে। পূজা শেষ হলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে বিজয়ার আয়োজন চলবে অতিথি আপ্যায়ন আর আনন্দ ভাগাভাগির মধ্য দিয়ে।
দৌলাতদিয়ার দক্ষিণ পাড়া বারোয়ারী দুর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক মিলন সাহা বলেন, দুর্গাপূজা আমাদের কাছে শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সামাজিক মিলনমেলার প্রতীক। ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত হাজারো ভক্ত এসেছেন। অঞ্জলি, সন্ধি পূজা আর হোমযজ্ঞে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। প্রশাসনের সহযোগিতায় সবকিছু সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দেবী বিদায় নিলেও তার আশীর্বাদ সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি আর সমৃদ্ধি বয়ে আনুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মন্দিরটির কোষাধ্যক্ষ অঞ্জন সাহা আবির বলেন, বিকেল ৩টা থেকে আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে মহাদশমীর শোভাযাত্রা শুরু হবে। শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দৌলতদিয়ার ব্রিজঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে। আমাদের যুব সদস্যরা বিশেষ টি-শার্ট পরে আর মহিলারা ঐতিহ্যবাহী শাড়ি পরে শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন। এতে পুরো শহর উৎসবমুখর হয়ে উঠবে। সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই, যেন আনন্দ ভাগাভাগি করতে আসেন।
চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার সার্বজনীন মন্দিরে পূজা উপভোগ করতে আসা ভক্ত সুমিতা দে বলেন, দেবী মায়ের সঙ্গে চারদিন কেটে গেলো। সবাই মায়ের আশীর্বাদ নিয়েছে। এ আশীর্বাদের কারণেই আমরা শান্তিতে থাকব। আগামী বছর মায়ের জন্য অপেক্ষা করবো, যাতে তিনি আবার ফিরে আসেন।
আজ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবীর বিদায় ঘটলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে বিজয়া মিলনমেলা চলবে। শুভেচ্ছা বিনিময়, অতিথি আপ্যায়ন আর সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধনে ভক্তরা দেবীর বিদায়ের বেদনা ভাগ করে নেবেন।