
অনবরত বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে রোববার রাতে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সোমবার সকালে তা বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে। রাতে ব্যারাজ রক্ষায় ফ্লাড বাইপাস কেটে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ফলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে জেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সোমবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১২ মিটার, যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২.১৫ মিটার) ৩ সেন্টিমিটার নিচে।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি ক্রমেই বাড়ছিল। রোববার সকাল থেকে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং রাতে তা বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ সময় তিস্তাপাড়ে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করে পাউবো।
অতিরিক্ত পানির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাতে ফ্লাড বাইপাস কেটে দেওয়া হয়, যার ফলে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তাপাড়ের হাজারো পরিবারের। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার কিছু অংশ বন্যায় প্লাবিত হয়।
বর্তমানে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার তিস্তা পাড়ের লাখো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। পানির চাপে ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বিশেষ করে আদিতমারী উপজেলার সোলেদি স্পার বাঁধ-২ এর ব্রিজ অংশের নিচে সুরঙ্গ তৈরি হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে, যা বাঁধটি ধসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
বন্যায় বেশ কিছু সড়ক ও রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। দোয়ানী-গড্ডিমারী সড়ক উপচে নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকে পড়ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে প্লাবিত এলাকার সংখ্যা। পানিবন্দি পরিবারগুলো পড়েছে চরম দুর্ভোগে। শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা। চারদিকে শুধু পানি আর পানি।
গবাদি পশু নিয়ে বিপদে আছেন খামারিরা—অনেকে পশু সরিয়ে নিয়েছেন সড়কে বা উঁচু স্থানে তাবু টানিয়ে। কেউ কেউ উঁচু স্থানে মাচা বানিয়ে রান্না করছেন। টিউবওয়েল ও টয়লেট ডুবে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নারীরা।
বন্যায় ডুবে গেছে মৎস্য খামার, আমন ধান ও নানান জাতের সবজির খেত। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা রাতে বেড়ে ২৯ সেন্টিমিটার ওপরে যায়। সোমবার সকালে তা বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকার ভুক্তভোগীরা জানান, “বাড়ির উঠানে কোমর পানি। রাতে ঘুমাতে পারিনি কেউ। চারদিকে শুধু পানি। আমন ধান ও সব ফসল ডুবে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।”
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, “ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলের কারণে তিস্তার পানি বেড়ে রোববার রাতে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হলেও সকালে তা কমে গেছে। বৃষ্টির পানি থাকায় বন্যার পানি নামতে সময় লাগছে। তবে উজানের চাপ কমে যাওয়ায় বিকেলে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে। পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”