ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চাঁদপুরে সনাতনীদের ঘরে ঘরে লক্ষ্মীদেবীর পূজা, বাজারে উৎসব

চাঁদপুরে সনাতনীদের ঘরে ঘরে লক্ষ্মীদেবীর পূজা, বাজারে উৎসব

লাড়ু, সন্দেশ, মুড়ি-চিড়ার মোয়া ও হরেক রকমের মিষ্টি জাতীয় খাবারের আয়োজনের মধ্য দিয়ে চাঁদপুরের সনাতনীদের ঘরে ঘরে উদযাপিত হয়েছে কোজাগরি লক্ষ্মীপূজো। পঞ্জিকার তিথি অনুযায়ী প্রতি বছর আশ্বিনী পূর্ণিমায় সনাতন ধর্মীয় রীতিনীতিতে ধন, ঐশ্বর্য ও শান্তির প্রত্যাশায় এ পূজো অনুষ্ঠিত হয়।

৬ অক্টোবর (সোমবার) সকালে থেকেই শহরসহ পাড়া-মহল্লার ঘরে ঘরে মেয়েরা দেবী লক্ষ্মীর পায়ের ছাপের আল্পনা আঁকায় ব্যস্ত সময় কাটান।

বাহের খলিশাডুলীর গৃহবধূ বাসনা রানী দত্ত বলেন, “আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দেবী লক্ষ্মী ভক্তদের ঘরে ধন, ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য ও শান্তির বর নিয়ে নেমে আসেন। বেশিরভাগ পরিবারেই ঘরোয়া পরিবেশে দেবীর পূজো হয়। গৃহিণীরা ধান, চাল, কুমড়ো ও ফলমূল দিয়ে দেবীকে নিবেদন করেন। পূজার আগে ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা এবং ধান-চাল দিয়ে আলপনা আঁকা ঐতিহ্যের অংশ।”

পূজার সময় পাঠ করা হয় ‘শ্রীশ্রী লক্ষ্মীচরিত’ এবং আরতি শেষে পরিবারের সবাই মিলে প্রসাদ গ্রহণ করেন।

শহরের কালীমন্দির প্রাঙ্গণে দেখা গেছে, নতুন পাটির ঝাঁপি, ধান, চাল, কলা, নারকেল, চিনি, মিষ্টি, আতপ চাল, ফুল, প্রদীপসহ পূজার উপকরণ বিক্রির ব্যস্ততা। কেউ প্রতিমা কিনলেও অনেকে ‘কলা বউ’ কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

লক্ষ্মীপূজাকে কেন্দ্র করে গত দুই দিন ধরেই চাঁদপুরের বড় বাজারগুলোতে ছিল উৎসবের আমেজ। মিষ্টির দোকানগুলোয় রসগোল্লা, সন্দেশ, পায়েস, নাড়ু ও ছানার মিষ্টিজাত পণ্যের বেচাকেনা ছিল জমজমাট। ফুলের দোকানগুলোতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়; বিশেষ করে গাঁদা ও শিউলি ফুলের চাহিদা বেড়েছিল কয়েকগুণ।

পাটের ঝাঁপি, বাঁশের চালুনি, ধানের ছড়া, মাটির প্রদীপ ও নতুন ধান-চালের ব্যবসায়ীরাও ছিলেন ব্যস্ত সময় পার করতে।

বিক্রেতা মৃণাল কান্তি দাস বলেন, “প্রতি বছরই এই সময় ভালো বিক্রি হয়। এবার দাম কিছুটা বেড়েছিল, কিন্তু বিক্রি কমেনি। সবাই চায় দেবীর আরাধনায় কোনো ঘাটতি না থাকুক।”

চাঁদপুর জেলা যুব ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব পার্থ গোপাল দাস বলেন, “এদিন গৃহিণীরা ঘরবাড়ি ধুয়ে-মুছে পরিচ্ছন্ন রাখেন। মাটির উঠোন ও ঘরের ভেতরে আলপনা আঁকেন, সাজিয়ে তোলেন পূজার মণ্ডপ ও ঘরের পূজাস্থল। সন্ধ্যা নামতেই প্রদীপ, ধূপের ঘ্রাণ ও ফুলের সুবাসে মুখরিত হয়ে ওঠে প্রতিটি সনাতনী ঘর।”

গৃহবধূ যমুনা রানী বলেন, “লক্ষ্মীদেবী আসেন পরিচ্ছন্ন ঘরে। তাই আমরা দিনভর ঘরসহ পুরো বাড়ি পরিষ্কার করেছি। এরপর নতুন চাল, নতুন ধান দিয়ে পূজা দিয়েছি। বিশ্বাস করি, এই পূজার মাধ্যমে ঘরে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে।”

পূজার পুরোহিত বিমল চক্রবর্তী বলেন, “লক্ষ্মীপূজা হচ্ছে এক শুভ শক্তির আরাধনা। এটি মানুষকে শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন, পরিশ্রম ও সততার মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথে চলার বার্তা দেয়।”

চাঁদপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান যুব ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অমরেশ দত্ত জয় বলেন, “কোজাগরি শব্দের অর্থ—‘কে জেগে আছো’। এই রাতে দেবী পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কে জাগরিত আছো?’—অর্থাৎ কে তাঁর পূজায় ও সৎসাধনায় নিমগ্ন। যিনি উত্তর দেন, তাঁর ঘরেই প্রবেশ করেন দেবী লক্ষ্মী এবং বরদান করেন সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য।”

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রার্থনা করি যেন দেবী লক্ষ্মী সবার ঘরে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আনেন। এই পূজোর উৎসব আমাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করে।

বাজারে উৎসব,লক্ষ্মীদেবীর পূজা,চাঁদপুর
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত