
কক্সবাজারের রামুতে একটি বিরোধপূর্ণ জমির মালিকানা নিষ্পত্তিতে তিন ভূমিকর্তা তিন ধরনের প্রতিবেদন দিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন জমির মালিক। একই অফিসের তিন স্তরের কর্মকর্তার আলাদা মতামতে মামলার জটিলতা আরও বেড়েছে।
নথি অনুযায়ী, রামু উপজেলার পেঁচারদ্বীপ মৌজার বিএস ৭৮ নং খতিয়ানের মালিক নুরুল ইসলাম ও নুরুল আলম।
ওই খতিয়ানের ৬১২ নং দাগের ৪১ শতক জমি থেকে ২৬ শতক এবং ৫২৭ নং দাগের ৩৬ শতক জমির মধ্যে ৮ শতক সরকার অধিগ্রহণ করে। বাকি ৪৩ শতক জমি দুই ভাইয়ের যৌথ ভোগদখলে রয়েছে।
সম্প্রতি কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের রাজস্ব আদালতে দায়েরকৃত নামজারী আপিল মামলা (নং ৬৩/২০২৪-রামু) সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিন কর্মকর্তা তিন ধরনের প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রথম প্রতিবেদনটি দাখিল করেন রামুর ধেছুয়াপালং ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সলিম উল্লাহ। ১৩ এপ্রিল দেওয়া প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, পেঁচারদ্বীপ মৌজার বিএস ৭৮ নং খতিয়ান হতে সৃজিত বিএস ৬৪৪ নং খতিয়ানের বিএস ৫২৭ নং দাগের আংশিক জমিতে প্রতিপক্ষের ভোগদখল রয়েছে। আপিলকারী নালিশী দাগে দখলে নেই। অধিগ্রহণকৃত অংশ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট জমিতে ৬১০ নং খতিয়ানের মালিক কটেজ নির্মাণ করে ভোগদখলে আছেন।
দ্বিতীয় প্রতিবেদন দেন রামু ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত কানুনগো মো. মাহবুবুর রহমান। ১৫ এপ্রিল তারিখে দেওয়া প্রতিবেদনে তিনি বলেন, নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, পেঁচারদ্বীপ মৌজার বিএস ৭৮ নং খতিয়ানের ৫২৭ ও ৬১২ নং দাগের জমির মধ্যে সমান অংশে নুরুল ইসলাম ও নুরুল আলম মালিক। তবে মাঠ পর্যায়ে দেখা যায়, নালিশী দাগে বাদীপক্ষ দখলে নেই, বিবাদী দখলে আছেন। তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, “খতিয়ানের অংশ অনুযায়ী বিবাদীর প্রাপ্যতা সঠিক এবং বাদীর দাবি সঠিক নয়।”
তৃতীয় প্রতিবেদন দাখিল করেন রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল। গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রদত্ত প্রতিবেদনে তিনিও উল্লেখ করেন, বিএস ৫২৭ ও ৬১২ নং দাগে রেকর্ডীয় মালিক দুই ভাই নুরুল ইসলাম ও নুরুল আলম সমান ভাগে প্রাপ্য। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, ৬১০ ও ৬৪৪ নং খতিয়ানের মালিকরা বর্তমানে জমিতে ভোগদখলে আছেন এবং বাদীপক্ষ দখলে নেই।
এই তিন প্রতিবেদনের মধ্যে একাধিক অসঙ্গতি থাকায় মামলার বাদী নুরুল আলম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি মাঠ পর্যায়ে পুনঃতদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দখল নির্ধারণে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, এসিল্যান্ড সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল ও কানুনগো মাহবুবুর রহমান প্রভাবশালী বিবাদী পক্ষ নাফিসা সানজিদার কাছ থেকে অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে ভ্রান্ত ও মনগড়া প্রতিবেদন দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কানুনগো মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমি কোনো অনৈতিক লেনদেন করিনি। কেউ প্রমাণ দিতে পারলে দিন। আমি কাগজ যাচাই করে যা সঠিক মনে হয়েছে, তাই প্রতিবেদন দিয়েছি।”
অন্যদিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাজ্জাদ জাহিদ রাতুলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাদী নুরুল আলম দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে ভাই নুরুল ইসলাম প্রতারণার মাধ্যমে জমি বিক্রি করেছেন। কিন্তু প্রতিবেদনে বিষয়টি গোপন করা হয়েছে এবং প্রতারণার ঘটনাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
তারা বলেন, “কিছু সরকারি কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা নিতে শোষকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আমরা এসব দুর্নীতির তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই।”