ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বরগুনায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীসহ ৩ জনের ফাঁসি

বরগুনায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীসহ ৩ জনের ফাঁসি

বরগুনায় স্ত্রীকে যৌতুকের দাবীতে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করার দায়ে স্বামী, সতিন ও মেয়ের জামাইকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে। রায় প্রদানকালে আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বেলা দুইটায় চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় প্রদান করেন বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতের জেলা জজ লায়লাতুল ফেরদৌস।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, জেলার পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত মাজেদ তালুকদারের ছেলে কবির তালুকদার (৫৯), তার ২য় স্ত্রী এলাচী বেগম (৫০) ও জামাতা, একই সঙ্গে এলাচী বেগমের ছেলে সুজন (৪০)।

মামলার বাদী ছিলেন এবং মামলার প্রধান অভিযুক্ত দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও নিহত মহিমা বেগমের ছেলে হেলাল তালুকদার।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদী হেলাল তালুকদারের মা ভিকটিম মহিমা বেগমকে পিতা আসামি কবির তালুকদারের সঙ্গে ৩০ বছর পূর্বে বিবাহ হয়। বৈবাহিক জীবনে বাদীর পিতা যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই তার মাকে নির্যাতন করতেন।

এছাড়াও তার ছোট বোনের শাশুড়ী আসামি এলাচী বেগমের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। বাদীর বোন রেখা বেগম তার পিতা ও শাশুড়ীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় এবং প্রতিবাদ করায় শাশুড়ী এলাচী বেগম ও জামাতা সুজন তার ওপর নির্যাতন চালানো শুরু করে। তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রেখা বেগম আত্মহত্যা করেন।

রেখা বেগমের মৃত্যুর ৩ থেকে ৪ বছর পর কবির তালুকদার তার মায়ের অমতে বোনের শাশুড়ী এলাচী বেগমকে ২য় বিয়ে করেন। বিয়ে না মানায় ভিকটিম মহিমা বেগমকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন এবং নির্যাতন চালানো শুরু হয়। এক পর্যায়ে বাদীর মা বিষপান করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন।

পরবর্তীতে চিকিৎসায় বেঁচে গেলেও আসামীরা মহিমা বেগমকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৩নং আসামী প্রস্তাব দেন, “আমি কারেন্টের মিস্ত্রি। কারেন্টে শক দিয়ে হত্যা করে, কারেন্টের শক খেয়েছে বলে চালিয়ে দিবে।”

ঘটনার দিন, ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর, আসামি কবির তালুকদার বাদী হেলাল তালুকদারকে বলে, “তোর শ্বশুর অসুস্থ্য, তুই তাড়াতাড়ি যা।” বাদী সরল বিশ্বাসে শ্বশুর বাড়ি গেলে দেখেন শ্বশুর সুস্থ। এরপর আসামিরা মহিমা বেগমকে ডান হাতের তিনটি আঙুল, পিঠ ও বুকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করে।

পরে চিৎকার করে বলে, “মহিমা বিদ্যুৎ এর শক খেয়েছে।” বাদী এসে দেখেন, ঘর থেকে ১০ মিটার দুরে তার মা আমড়া গাছের সঙ্গে হেলে পড়া অবস্থায় ছিলেন।

মামলার রায় শুনে বাদী হেলাল তালুকদার বলেন, “রায়ে আমি আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। আমার মায়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি হওয়ায় আমি আইনকে শ্রদ্ধা জানাই।”

মামলা পরিচালনাকারী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর হোসনেয়ারা শিপু জানান, মামলার ভিকটিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালতের কাছে সাক্ষীদের সাক্ষ্যতে হত্যাকান্ড প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের মৃত্যুদন্ড ও ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই রায় প্রদানের মাধ্যমে সমাজে অপরাধ কমে আসবে।

মামলায় প্রধান আসামি কবির তালুকদারের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেছেন এডভোকেট তরিকুল ইসলাম তরু ফরাজী। আসামী এলাচী বেগম ও সুজনের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেছেন এডভোকেট ইমরান হোসেন।

৩ জনের ফাঁসি,স্বামীসহ,স্ত্রী হত্যার দায়,বরগুনা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত