
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বারমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার দাস (রাখাল) (৫৭) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঁচদিন ধরে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়। চন্দন কুমার দাস পৌরশহরের আমলাপাড়া এলাকার মৃত চন্দ্র শেখর দাসের বড় ছেলে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে চন্দন স্যারের স্ত্রী শেলী রানী দাস স্কুলের এক শিক্ষককে ফোন করে জানান, তার স্বামী অসুস্থ, দ্রুত বাসায় যেতে বলেন। খবর পেয়ে শিক্ষকরা বাসায় পৌঁছালে শেলী রানী তাদের ভেতরে যেতে নিষেধ করেন এবং বলেন, ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
কিন্তু শিক্ষক ও স্থানীয়রা সন্দেহ প্রকাশ করে জোরপূর্বক ঘরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক প্রায় অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন। তার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছিল এবং হাতে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাঁটাচিহ্ন দেখা যায়। পরে দ্রুত তাকে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক অবস্থার অবনতি দেখে ময়মনসিংহে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
দুপুরের দিকে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পাঁচদিন আইসিইউতে থাকার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ঘটনার আগের রাতেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল বাগবিতণ্ডা ও জিনিসপত্র ভাঙচুরের শব্দ শোনা যায়। এর আগেও শেলী রানী দাস প্রায়ই এমন আচরণ করতেন বলে জানান তারা।
প্রধান শিক্ষকের সহকর্মী মোজাম্মেল মাস্টার বলেন, “স্যারকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাই, তার গলায় ও হাতে ধারালো কিছু দিয়ে কাটা চিহ্ন ছিল, ক্ষত থেকে তখনও রক্ত ঝরছিল। মুখ দিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত লালা বের হচ্ছিল। মনে হয়েছে তাকে কোনো চেতনানাশক জাতীয় কিছু খাইয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।”
চন্দন কুমার দাসের মৃত্যুতে স্থানীয় সচেতন মহল, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, উপজেলা শিক্ষক সমিতি, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী সমাজ গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানিয়েছেন, মরদেহটি ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছয় মাস আগে প্রধান শিক্ষকের ছোট ভাই টুকন চন্দ্র দাসের আকস্মিক মৃত্যু হয়। সন্তান না থাকায় চন্দন দাস তার ভাইয়ের মেয়ে টুম্পা দাসকে নিজের মেয়ের মতো লালনপালন করতেন। এ নিয়েই তার স্ত্রী শেলী রানী দাস প্রায়ই ঈর্ষান্বিত হয়ে ঝগড়া করতেন বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন।