ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাহাড়ে আখচাষে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলেছে তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া

পাহাড়ে আখচাষে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলেছে তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ায় পাহাড়ি প্রান্তিক কৃষকেরা এখন নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন—আখ চাষে সফলতার গল্প লিখে। পার্বত্য এলাকায় তুলনামূলক কম পরিচিত এই ফসল এখন ধীরে ধীরে পাহাড়ি অর্থনীতির সম্ভাবনাময় শাখায় পরিণত হচ্ছে।

২০২৪–২০২৫ রোপণ মৌসুমে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের “সুগারক্রপ জোরদারকরণ প্রকল্প”-এর আওতায় চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের রেশম বাগান এলাকায় নয়টি প্লটে আখ চাষ করেন স্থানীয় তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের কৃষকরা।

প্রথমবারের মতো এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক আকারে আখ চাষ শুরু হয়, এবং ফলন আশাতীত হওয়ায় চাষীদের মধ্যে এখন ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।

রেশম বাগান এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি আখের সবুজ সারি হেলে দুলছে পাহাড়ি বাতাসে। চাষীরা আখ কেটে ট্রাকে করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ ইতোমধ্যে বিক্রি শেষ করেছেন, কেউ আবার নতুন অর্ডার নিচ্ছেন।

আখচাষী মায়াদেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “আমি ৬০ শতাংশ জমিতে আখ লাগিয়েছিলাম। এ বছর ফলন অসাধারণ হয়েছে। পাইকাররা প্রতি পিস আখ ২২ থেকে ২৫ টাকায় কিনে নিচ্ছেন। কিছু আখ বিক্রি করেছি, ভালো লাভও হয়েছে।”

অন্য চাষী ইতি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, “প্রায় ১ একর জমিতে আখ লাগিয়েছিলাম। ফলন ভালো হয়েছে। বিক্রির পর বুঝতে পারলাম—এটা পাহাড়ের জন্য খুবই লাভজনক ফসল।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের “সুগারক্রপ জোরদারকরণ প্রকল্প”-এর কনসালটেন্ট ধনেশ্বর তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “আমরা প্রকল্পের আওতায় চাষীদের প্রশিক্ষণ, বীজ, সার ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছি। প্রত্যেক চাষীকে ১ বিঘা করে জমিতে আখ চাষের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, এখানে চাষ করা হচ্ছে বিএসআরআই আখ-৪২ (রং বিলাস) জাতের আখ, যা উচ্চফলনশীল ও মিষ্টতার মানেও উন্নত। চাষীরা খুব অল্প সময়ে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

স্থানীয় চাষীদের হিসাবে, প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ ২৫-৩০ হাজার টাকা। এক মৌসুম শেষে বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকায়, ফলে প্রতি বিঘায় নেট লাভ দাঁড়ায় প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা। এই লাভের হার দেখে অনেকে আগামী মৌসুমে আরও বেশি জমিতে আখ চাষের পরিকল্পনা নিচ্ছেন।

পাইকারি ক্রেতা জহিরুল ইসলাম, যিনি চট্টগ্রাম থেকে আখ কিনে নিয়ে যান, বলেন, “এই এলাকার আখ খুবই মিষ্টি ও দৃষ্টিনন্দন। স্থানীয় চাষীরা এখন বাজারে নতুন সরবরাহকারী হিসেবে উঠে আসছেন।”

পাহাড়ি মাটিতে আগে তেমনভাবে আখ চাষ প্রচলিত না থাকলেও, এই সফলতার পর নতুন করে আশার আলো দেখছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য লালরেম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “আখ চাষে নারীরা এখন স্বনির্ভর হচ্ছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক পরিবর্তনও আনছে।”

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার মতে, পাহাড়ি উঁচু-নিচু জমিতেও আখ চাষ সম্ভব, কারণ এই ফসল কম পরিচর্যা ও মাঝারি পানির সরবরাহেই ভালো ফলন দেয়। ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা বৃদ্ধি পেলে পাহাড়ি অর্থনীতিতে আখ হবে একটি স্থায়ী আয়ের উৎস।

তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া,নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত,পাহাড়ে আখচাষ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত