
নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নে শান্তি ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এক মঞ্চে মিলিত হয়েছেন।
নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালীতে সম্প্রতি আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তিন ব্যক্তি নিহত হওয়ার পর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাম দিতে এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে শনিবার জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির আয়োজনে স্থানীয় আলোকবালী ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন এর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. মেজবাউল আলম, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সভাপতি খাইরুল কবীর খোকন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা জাহান সরকার, সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ এমদাদুল হক, নরসিংদী জজ কোর্টের পিপি এডভোকেট আব্দুল বাছেদ ভূইয়া, জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক এডভোকেট আমিরুল ইসলাম আমির ও জেলার ছাত্র সমন্বয় মুনিয়া সরকার।
সভায় আলোকবালী ইউনিয়নে সকল অবৈধ অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য উদ্ধার, সন্ত্রাসী-খুনীদের গ্রেপ্তার, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান, এলাকায় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়ন, জনগণের যাতায়াতের সুবিধার্থে নদীতে ব্রিজ নির্মাণ, নৌপথে চলাচলের জন্য নৌ চালকদের পরিচয়পত্র, স্পিডবোট চলাচলের জন্য লাইসেন্স প্রদানসহ বেশ কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সম্প্রতি আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী ও সদ্য বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুমের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ইরান মিয়া, সাজেক মিয়া ও কূফেরদৌসী বেগম নামে তিন ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ ধরণের হত্যাকান্ড আর কখনো যেন না ঘটে, সে জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
সভায় আলোকবালী ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য ৭৬ লক্ষ ৩২ হাজার টাকার তিনটি প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।
সাবেক এমপি খায়রুল কবীর খোকন আলোকবালীতে সম্প্রতি তিনটি হত্যাকান্ডের সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলম বলেন, “সন্ত্রাসী অস্ত্রবাজদের ঠাই আলোকবালী তথা নরসিংদীতে হবে না। এই সন্ত্রাসী হত্যাকারীরা যেখানেই আশ্রয় নিক বা প্রশ্রয় পাচ্ছে না কেন, তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।”
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, “এলাকায় শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আলোকবালী ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে আইন-শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা হবে। এখন থেকে আলোকবালী ইউনিয়নের প্রতি জেলা প্রশাসনের আলাদা নজর থাকবে। এখান থেকে যেন আর কোনো লাশ না পড়ে, তার জন্য আমি সকলের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করছি। আজকের পর যদি কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটে, জেলা প্রশাসন কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করবে না।”
মতবিনিময় সভার শুরুতে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা আলোকবালীতে সম্প্রতি নিহত তিন ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের সাথে কথা বলেন এবং খোঁজখবর নেন।