
কক্সবাজারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে কক্সবাজার প্রেসক্লাব।
বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি প্রদান করেন প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপি প্রদানকালে কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবর রহমান বলেন, দেশের পর্যটনের রাজধানী হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার এখনো শিক্ষা-দীক্ষায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অথচ কক্সবাজার এখন শুধু বাংলাদেশের একটি পর্যটন শহর নয়, এটি হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক ব্যবসা, সুনীল অর্থনীতি ও আঞ্চলিক সংযোগের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে।
কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও এখনো পর্যন্ত এই জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কোনো বাস্তব উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।
স্মারকলিপি গ্রহণকালে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, কক্সবাজারে অবশ্যই একটি প্রযুক্তি নির্ভর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন রয়েছে। কক্সবাজার একটি অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় জেলা। এই গুরুত্ব বিবেচনা করে কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ও সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে জেলা প্রশাসক প্রতিশ্রুতি দেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, কক্সবাজার জেলার অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা—এই তিন ধারা একসঙ্গে বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ সরকার এখানে মানুষকেন্দ্রিক ও অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।
কক্সবাজারের জনসংখ্যা ২৬ লাখের বেশি এবং পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শরনার্থী শিবির কক্সবাজারে অবস্থিত, যেখানে বসবাস করছে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থী। কক্সবাজারে রয়েছে অসীম প্রাকৃতিক সম্পদ, সমুদ্র অর্থনীতি ও সম্ভাবনাময় মানুষ।
এছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালীতে দেশের বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হয়েছে এবং মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন দেশের একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দরও এখানেই অবস্থিত। এসবের পাশাপাশি কক্সবাজারে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলমান থাকলেও কক্সবাজারে উচ্চ শিক্ষার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। সরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থাকলেও উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রতি বছর হাজারো শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম বা ঢাকায় যেতে হয়। অথচ অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয়রা।
আপনার সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সুপারিশ প্রদান করেছিল। ওই সুপারিশে ভৌগোলিক দিক বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চারটি বিশেষ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল।
মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশে কক্সবাজার বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে চারটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো হলো— ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, সমুদ্র বিজ্ঞান, দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা, এবং মৎস্য বিজ্ঞান। কক্সবাজারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় কক্সবাজারে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে এখানকার তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যা জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্র বিজ্ঞান, মৎস্য, পরিবেশ, পর্যটনসহ প্রযুক্তির ব্যবহার ও গবেষণার মাধ্যমে দেশের তরুণ প্রজন্ম কারিগরি জ্ঞান ও উদ্ভাবনী সক্ষমতায় সমৃদ্ধ হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এই অঞ্চলের অর্থনৈতিকসহ সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানান কক্সবাজার প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপি প্রদানকালে আরো উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন বাহারী, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সভাপতি নুরুল ইসলাম হেলালী, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকরাম চৌধুরী টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুল হক শারেক, মোয়াজ্জেম হোসেন শাকিল, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহেদ মিজান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।