ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

তাড়াইলে কৃষকদের মাঝে সারের তীব্র সংকট, চলছে হাহাকার

তাড়াইলে কৃষকদের মাঝে সারের তীব্র সংকট, চলছে হাহাকার

চলতি আমন মৌসুমে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। একদিকে ডিলারদের কাছ থেকে সার মিলছে না, অন্যদিকে খোলা বাজারে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে সার। এ পরিস্থিতিতে কৃষকদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে গতকাল বুধবার ধলা ইউনিয়নের ভেইয়ারকোনা গ্রামের কৃষক মুসলিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে ২০ কাটা জমিতে রোপা-আমন চাষ করেছি এবং ৬০ কাটা জমিতে সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করেছি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, দিনের পর দিন ডিলার পয়েন্টে সারের জন্য ধরনা দিতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে কিছু সার মিললেও চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না। খোলা বাজারে একই সার পাওয়া যাচ্ছে কয়েক গুণ বেশি দামে। এর পেছনে ডিলারদের সিন্ডিকেট ও কৃষি অফিসের গাফিলতি রয়েছে।

রাউতি ইউনিয়নের মেঁছগাঁও গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে ৪৫ কাটা জমিতে রোপা-আমন চাষ করেছি এবং ৫ কাটা জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করেছি।

তিনি জানান, ডিলারদের গুদামে পর্যাপ্ত সার থাকলেও তারা কৃষকদের কাছে সরবরাহ না করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। সারের অভাবে দুর্বল হচ্ছে রোপা আমন, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ।

কৃষকরা আরও বলেন, এসব ঘটনা কৃষি অফিস জেনেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মাঠ পর্যায়ে তাদের তদারকি নেই। ডিলারদের কারসাজি রোধে নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। ডিলারদের সঙ্গে তাদের গোপন সমঝোতা আছে বলেও দাবি করেন তারা।

ডিলারদের একটি সূত্র জানায়, আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে রোপা-আমনের জন্য সারের প্রয়োজন থাকে এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে শীতকালীন সবজি চাষের জন্য সারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী সার না পাওয়ায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে বিসিআইসি সার ডিলার রয়েছেন ১০ জন এবং বিএডিসি সার ডিলার রয়েছেন ৫ জন।

সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা কেজি দরে প্রতি বস্তা ইউরিয়া সার বিক্রির কথা এক হাজার ৩৫০ টাকা, ২০ টাকা কেজি দরে এমওপি সার এক হাজার টাকা, ২৭ টাকা কেজি দরে টিএসপি সার এক হাজার ৩৫০ টাকা ও ২১ টাকা কেজি দরে ডিএপি সার প্রতি বস্তা এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা।

সরাসরি অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিলারদের কাছ থেকে সার পাওয়া না গেলেও খোলা বাজারে ২৭ টাকা কেজি দরের ইউরিয়া সার বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, টিএসপি ৩৭ টাকায়, ডিএপি ২৮ টাকায় এবং এমওপি ২৮ টাকায়।

তাড়াইল সদর বাজারের বিসিআইসি সার ডিলার শাহাব উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, চলতি মাসে টিএসপি ৮১ বস্তা, এমওপি ২৪৫ বস্তা, ডিএপি ১৮৭ বস্তা ও ইউরিয়া ৩৪০ বস্তা বরাদ্দ পেয়েছি, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

ধলা ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স গৌরাঙ্গ চন্দ্র পাল বলেন, চলতি মাসে টিএসপি ৮১ বস্তা, এমওপি ২৪৫ বস্তা, ডিএপি ১৮৭ বস্তা ও ইউরিয়া ৩০০ বস্তা বরাদ্দ পেয়েছি, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

কৃষকদের উদ্দেশে উপজেলা কৃষি উপসহকারীগণ বলেন, ধান খেতে এখন ডিএপি সার লাগার কথা নয়। ডিএপি জমি প্রস্তুতের সময় প্রয়োগ করতে হয়। এই সার ফসলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। আমন খেতে এই সময়ে ডিএপি দিলে ফলনের চেয়ে ক্ষতি বেশি হতে পারে। এতে রোগ ও পোকামাকড় বাড়বে। ইউরিয়া ও এমওপি প্রয়োগ করা যেতে পারে। আমরা মাঠে থেকে কৃষকদের এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বিকাশ রায় বলেন, আমাদের এখনো সারের যে মজুত আছে, তা গত বছরের এই সময়ের চেয়ে বেশি। কিছু ব্যবসায়ী পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে সংকট ভেবে আতঙ্কে বেশি করে সার কিনে রাখার চেষ্টা করছেন। তৃতীয় পক্ষ কৃষকদের উসকে দিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। আমরা ডিলার পয়েন্টগুলোতে মনিটরিং করে উত্তোলন করা সারের সঙ্গে স্টক যাচাই করছি। কিছু জায়গায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

চলছে হাহাকার,সারের তীব্র সংকট,তাড়াইলে কৃষক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত