
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে গরিব, অসহায় ও গৃহহীন মানুষের জন্য বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থা। শুধু ঘর নয়, শীতবস্ত্র বিতরণ থেকে শুরু করে আইনি সহায়তা সহ সব ধরনের মানবিক কাজে পাশে রয়েছে ওই সংগঠনটির কার্যক্রম।
জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার বাস্তবায়নের অঙ্গীকারে ‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থা’ দুর্গাপুর উপজেলা শাখা এগিয়ে চলছে তৃণমূল পর্যায়ের নানামুখী কর্মসম্পাদনের মধ্য দিয়ে। উপজেলার বিরিশিরি ইউনিয়নের কাপাসাটিয়া গ্রামে ৬টি গৃহহীন পরিবারের হাতে নির্মিত ঘরগুলো বুঝিয়ে দেন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির চীফ কো-অর্ডিনেটর মো. মিলাদ আহমেদ।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে কাপাসাটিয়া ও গাভিনা এলাকায় ওই উপহার ঘরগুলো বিতরণ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থা দুর্গাপুর উপজেলা শাখাটি দুর্গাপুরে ১ বছর আগে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বিরিশিরি ইউনিয়নের কাপাসাটিয়া গ্রামে যেখানে গৃহহীন ও অসহায় মানুষের জীবন কাটতো খোলা আকাশের নিচে কিংবা জরাজীর্ণ টিনের চালায়। ঠিক সেই মানুষগুলোর জন্য ছয়টি নতুন ঘর নির্মাণ করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থা।
ওই ঘরগুলো শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই নয়, এটি যেন স্বপ্ন পূরণের এক ঠিকানা। ঘর পাওয়া ওই অসহায় মানুষগুলো বলছেন, এমন একটি স্থায়ী ঘর পাওয়া তাদের কাছে এক নতুন জীবনের অধ্যায়ের মতো।
নতুন ঘর পেয়ে মতিকুল ইসলাম বলেন, “আমি পরিবারসহ অনেক দিন ধরে কষ্টে ছিলাম। বৃষ্টি এলে ঘরে পানি পড়ত, ঘর ভেঙে পড়তো। আমার এমন করুণ জীবনচিত্র সরেজমিন দেখে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির চীফ কো-অর্ডিনেটর মো. মিলাদ আহমেদ আমাকে নতুন একটি ঘর নির্মাণ করে দেন। নিজের ঘর পেয়ে আমরা অনেক খুশি। আল্লাহ যেন তাঁদের মঙ্গল করুক।”
নির্মিত ঘর প্রাপ্ত নজরুল ইসলাম, হাবিকুল, আবেদ আলী, সাদেকুল, কামাল আনন্দ অশ্রুস্বরে বলেন, “এই ঘর পেয়ে এখন মনে হচ্ছে নিজেদের একটা পৃথিবী হয়েছে। এমন সহায়তা আর কখনো পাইনি।”
ঘর নির্মাণই নয়, শীত মৌসুমকে সামনে রেখে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে সংগঠনটি। যাতে কেউ ঠান্ডায় কষ্ট না পায়। পাশাপাশি আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থার উপজেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “আমাদের সংগঠনের মূল লক্ষ্য হলো গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে থাকা। শুধু ঘর তৈরি করে দেওয়া নয়, তাদের সব ধরনের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে আমরা মাঠে কাজ করছি। সরকারের সহযোগিতা পেলে এই কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করতে চাই।”
বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন, “এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা এভাবে পাশে থাকলে অসহায় মানুষদের জীবন অনেকটা বদলে যাবে।”
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির চীফ কো-অর্ডিনেটর মো. মিলাদ আহমেদ জানান, “সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে শুরু করে মানবিক মূল্যবোধ সবকিছু মিলিয়ে দুর্গাপুরে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থার উদ্যোগে আমার একান্ত ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় গৃহহীন মানুষের জীবনে নতুন আশা এসেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের সুষ্ঠু বাসস্থানের লক্ষ্যে ২২টি নতুন ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৬টি ঘর নির্মাণ কমপ্লিট ও বিতরণ করা হয়েছে। বাকী ১৬টি ঘর নির্মাণের কাজ অনেকটা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই অসম্পূর্ণ ঘরগুলো কাজ শেষ করে গ্রাহকদের হাতে তুলে দিতে পারবো। ভবিষ্যতে আরও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে রয়েছে। আসন্ন শীতকে সামনে রেখে দুর্গাপুর উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আফসানা আফরোজ বলেন, “এই উদ্যোগ শুধু ঘর দেওয়া নয়, এটি একটি মানুষের আত্মসম্মান ফিরিয়ে দেওয়া। আমরা চাই এই উদাহরণ আরও ছড়িয়ে পড়ুক।”