
পাবনার হেমায়েতপুর আশ্রয়ণকেন্দ্রের ঘরগুলো জরাজীর্ণতায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঘর নির্মাণের প্রায় দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও কোনো সংস্কার হয়নি। ঘরগুলোর উড়ে গেছে টিনের চালা ও বেড়া। চোর ও মাদকসেবীরা খুলে নিয়ে গেছে দরজা-জানালা। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও সড়ক ভেঙে পড়েছে।
ফলে আশ্রয়ণকেন্দ্রের ২৯০ বাসিন্দাদের মধ্যে ২০০ জনই ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, ২০০১ সালে ২৯০টি দরিদ্র পরিবারকে বসবাসের জন্য পাবনা শহরের নিকটে সদর উপজেলার হেমায়েতপুরে প্রায় ৫৭ বিঘা জমির ওপর আশ্রয়ণকেন্দ্র নির্মিত হয়। প্রতিটি টিনশেডের ঘরের সঙ্গে আনুপাতিক হারে দেওয়া হয় টিনশেড টয়লেট ও টিউবওয়েল। তবে বরাদ্দ বুঝিয়ে দেওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত ঘরগুলো সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, টিন দিয়ে নির্মিত হওয়ায় নির্মাণ শেষে ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার বছর দশেক ভালো থাকলেও পরে ঘরগুলোর দশা বেহাল হতে থাকে। ঘরগুলোর বেড়া ও চালা নষ্ট হওয়াসহ নানা কারণে ধীরে ধীরে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে বরাদ্দ দেওয়া টয়লেট ও টিউবওয়েলের অধিকাংশ অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে ধীরে ধীরে ঘর ছেড়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয় বাসিন্দারা। গত এক থেকে দেড় দশক ধরে সরকারি কর্মকর্তারা পরিদর্শন করলেও কেউ ঘর সংস্কারের তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, আশ্রয়ণকেন্দ্রে প্রায় বিশটি সারির প্রতিটিতে গড়ে ২০টি করে ঘর দাঁড়িয়ে। কোনো ঘরের চাল আছে বেড়া নেই, আবার বেড়া আছে চাল নেই। কেউ না থাকায় দরজা-জানালা খুলে নিয়ে গেছে স্থানীয় মাদকাসক্তরা।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রতিটি ঘরে এক সময় একটি করে পরিবার বাস করতেন। কিন্তু এখন এসব ঘরে লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রায় প্রতিটি ঘরের চাল দিয়ে এখন আকাশ দেখা যায়। শীতের দিনে ঠান্ডা কনকনে হাওয়া ও বৃষ্টির দিনে পানি আসে টিনের ভাঙা বেড়া দিয়ে। নেই চলাচলের সড়ক ও খাবার পানিসহ পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বৃষ্টি এলে উঠোন দিয়ে হাঁটু পানি ও কাদায় চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আশ্রয়ণকেন্দ্রের ৭০ বছর বয়সী আনোয়ারা বেগম দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়ে বলেন, এ ঘর আমি বরাদ্দ পাই নাই। ফাঁকা পড়ে ছিল। তাই চার বছর আগে এখানে উঠি। কিন্তু ঘরে থাকার উপায় নেই। যাবার জায়গা নাই তাই বাধ্য হয়ে থাকি। চালের একটা টিনও ভালো নেই। বৃষ্টি এলে রাত জেগে বসে থাকতে হয়। রাতে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এতে ভাঙা টিনের চালের পানিতে বিছানা ভিজে গেছে। এ লাইনে ১০টা ঘর। এর একটিরও বেড়া বা চাল ঠিক নেই। কয়েকটার তো চালই নেই। কল-টয়লেট সব নষ্ট।
আশ্রয়ণকেন্দ্রের আরেক বাসিন্দা মাজেদ মোল্লা বলেন, ঘরগুলো শুধু দেওয়াই হয়েছে। ২৫ বছর ধরে এখানে বাস করি। এর মধ্যে আর কেউ কোনো খবর নেয়নি। আমাদের ৪০ ঘর মিলে এক কল ও ২০ ঘর মিলে এক টয়লেট ব্যবহার করতে হতো। অধিকাংশ ঘর ছেড়ে অন্যখানে গেছে। ফলে এখন এত লোক নাই। আবার টয়লেট-কলও নাই। সব নষ্ট। এ আশ্রয়ণকেন্দ্র একেবারে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
আরেক বাসিন্দা আসাদ হোসেন বলেন, বছর দশেক হয় ঘরের অবস্থা একেবারে খারাপ। এজন্য ২৯০ ঘরের মধ্যে মাত্র ৯০টির মত ঘরে লোক আছে। আমাদের যাদের অন্য কোথাও যাবার জায়গা নাই, শুধু তারাই রয়েছি। ঘরের অবস্থা তো খারাপই, এমনকি হাঁটাচলার মত পরিবেশও নাই। আমরা গরিব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। ঘর মেরামত করার মত অর্থ নাই। এ ঘর ছাড়া আমাদের থাকার উপায়ও নাই। তিনি ঘরগুলো ঠিক করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
অপর বাসিন্দা গোলাপি ও নাসরিন বলেন, সবগুলো ঘরের একই অবস্থা। কেউ এগুলো দেখে না। ১০-১৫ বছর ধরে প্রতিবার অফিসাররা এসে খালি লিখে নিয়ে যায়। কিন্তু কিছু করে না। এই ঘরে আমাদের থাকা খুব কঠিন হয়ে গেছে। চাল দিয়ে পানি পড়ে। বেড়ার ফাঁক দিয়েও পানি ও বাতাস ঢোকে। পলিথিন দিয়েও এগুলো ঠিক রাখা যায় না। আমরা হতদরিদ্র মানুষ, ঘর মেরামতের সামর্থ্য আমাদের নেই। তারা আরো বলেন, সরকার যেহেতু আমাদের ঘরগুলো করে দিছিল, সেহেতু সরকার দয়া করে এগুলো ঠিক করে দিক।
এ বিষয়ে পাবনা সদর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম. ফুয়াদ বলেন, এ দায়িত্বে আমি নতুন। ফলে সুনির্দিষ্টভাবে বিষয়টি সম্পর্কে জানা নেই। তবে জেনেছি এর আগে আশ্রয়ণ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করা হয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কী কী সংস্কার লাগবে সেগুলো নোট করে ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হয়েছে।