ফরিদপুর-১ (আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী) আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বোয়ালমারী উপজেলার চৌরাস্তায় বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালীর বিএনপি কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এই বিরোধের সূচনা হয়।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ থেকে আসা কয়েকজনকে বিএনপিতে অন্তর্ভুক্ত করে নিজের পছন্দমতো কমিটি গঠন করেছেন। এতে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হয়েছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
মানববন্ধন চলাকালে একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা মাঝকান্দি–ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক আংশিকভাবে অবরোধ করেন। এতে সাময়িক যানজট সৃষ্টি হয়। ঠিক সেই সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ঘটনাস্থল দিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকা মাগুরার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীরা তার গাড়ি ঘিরে স্লোগান দিতে থাকেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে নিতাই রায় চৌধুরী নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে সেখান থেকে চলে যান।
পরে বিক্ষোভকারীরা একটি মিছিল বের করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন এবং স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সদ্য ঘোষিত বিএনপির কমিটিতে প্রকৃত কর্মীদের বঞ্চিত করে আওয়ামী লীগপন্থী ও আর্থিকভাবে সুবিধাভোগীদের পদ দেওয়া হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম টাকা খেয়ে আওয়ামী লীগারদের দিয়ে বিএনপির কমিটি গঠন করেছেন। দীর্ঘদিন জেল–জুলুম, হামলা–মামলা সহ্য করে যারা দলের জন্য সংগ্রাম করেছেন তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। অনতিবিলম্বে খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে দল থেকে বহিষ্কার করে দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান বক্তারা।
তারা আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এই আওয়ামী লীগপন্থী কমিটি বাতিল না হলে ফরিদপুর-১ আসনে রাজপথে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। খন্দকার নাসিরুল ইসলাম অতীতেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে একাধিকবার বহিষ্কৃত হয়েছেন, অথচ পুনরায় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিতর্কিত ব্যক্তিদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এতে দলের আদর্শ এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি অবমাননা করা হয়েছে।”
বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বাবু, উপজেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব নাজিম উদ্দিন মিলু মিয়া, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ডা. আব্দুস সবুর, পৌর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কালা মিয়া, সাবেক ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর আলম মুকুল, বিএনপি নেতা ও সাবেক মেম্বার এনায়েত হোসেন, মফিজুর কাদের খান মিল্টন, সাবেক কাউন্সিলর শেখ আজিজুল হক, সাবেক কাউন্সিলর শেখ আতিকুল আলী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য সচিব জাকির হোসেন চৌধুরী, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি রইসুল ইসলাম পলাশসহ আরও অনেকে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ অক্টোবর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা ও সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপনের স্বাক্ষরে বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌর বিএনপির ১০১ সদস্য বিশিষ্ট দুটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।
