ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মৌসুম শুরু হলেও মাঠে নেই লবণ চাষিরা

ন্যায্য মূল্য ও লবণ গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপনের দাবীতে মহাসমাবেশ
মৌসুম শুরু হলেও মাঠে নেই লবণ চাষিরা

গত বছর থেকে লবণের দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। মাঠপর্যায়ে এখনও এক মণ লবণের দাম ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। অথচ প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে খরচ পড়েছে অন্তত ৪০০ টাকা। দামের এই অনিশ্চয়তায় হতাশ লবণচাষিরা। ফলে উৎপাদনের মৌসুম শুরু হলেও মাঠে নামতে সাহস পাচ্ছেন না অধিকাংশ লবণ চাষি।

দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকেন্দ্র কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী সমুদ্র উপকূল। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত উৎপাদনের মৌসুম ধরা হয়। এই সময়ে সাগরের লোনাপানি শুকিয়ে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, সদর ও টেকনাফ এবং পাশের চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়ার উপকূলে লবণের চাষ হয়; যা থেকে পূরণ হয় দেশের সার্বিক লবণের চাহিদা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) আওতাধীন কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশীখালী ইউনিয়নে মৌসুমের প্রথম লবণ উৎপাদন হয়। তখন এ উপজেলায় ৬ হাজার ৭৫৮ একর জমির মধ্যে ৭০ শতাংশ জমি উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করেছিল চাষিরা। প্রথম সপ্তাহে উৎপাদন হয়েছিল ৫৫ টন লবণ। পাশাপাশি পেকুয়া,টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ জমিতে চাষিরা মাঠে নেমেছিলেন।

কিন্তু এ বছর মৌসুম শুরু হলেও কুতুবদিয়া ছাড়া অন্য জায়গায় বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) পর্যন্ত চাষিরা মাঠে নামেননি বলে জানান বিসিক কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভুঁইয়া।

তিনি বলেন, বৈরি আবহাওয়া থাকায় চাষিদের মাঠে নামতে বিলম্ব হচ্ছে। এতে লবণ উৎপাদন হতে আরও অন্তত ২০-২২দিন লেগে যাবে। গত মৌসুমে প্রতি কানি জমিতে (৪০শতক) লবণ উৎপাদনে ৩৫ হাজার টাকা করে লোকসান হয়েছে কুতুবদিয়ার লেমশী খালীর লবণ চাষি আবদুল গফুরের।তিনি জানান, দাম না থাকায় এবার লবণ চাষে নামতে সাহস করছেন না চাষিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লবণ উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ানোর জন্যে জমি মালিকেরা চাষিদের কানি প্রতি জমির লাগিয়ত ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিয়ে এনেছে। তারপরও এবার লবণ উৎপাদনে প্রভাব পড়বেনা বলে মনে করেন পেকুয়ার করিয়ারদিয়ার লবণ চাষি সিরাজুল মোস্তফা। তিনি এ উপজেলায় বড় চাষিদের একজন। গত মৌসুমে তিনি ২৫০ একর জমিতে চাষ করেছিলেন। এতে তার ৪০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

সিরাজুল মোস্তফা বলেন, প্রতি একর জমিতে লবণ উৎপাদনে খরচ পড়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ওপরে। উৎপাদন হয় ৬০০ থেকে ৬৫০ মণ লবণ।

কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের সূত্রমতে, গত মৌসুমে দেশে ২৬ লাখ ১০ হাজার টন লবণ উৎপাদনের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টন। এর আগের বছর উৎপাদন হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন। চলতি মাসের ১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে গত মৌসুমে উৎপাদিত লবণ মজুত আছে ৪ লাখ ২০৩ টন। মাঠপর্যায়ে প্রতিমণ লবণের গড়মূল্য ২৪০ টাকা। গত মৌসুমে কক্সবাজারের সাত উপজেলায় ৫৯ হাজার ৯৯ একর এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়ায় ১০ হাজার ৮৯ একর জমিতে লবণ চাষ হয়। উৎপাদনে জড়িত চাষির সংখ্যা ৪১ হাজার ৩৫৫ জন।

মাঠপর্যায়ে লবণের দাম না থাকায় চাষিদের মধ্যে হতাশা রয়েছে বলে জানান বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভুঁইয়া।

তিনি বলেন, চাষিদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে।

উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য ও লবণ গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপনের দাবীতে লবণ চাষী মহাসমাবেশ

কক্সবাজারে উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য ও বাংলাদেশ লবণ গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপনের দাবীতে লবণ চাষী মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলা লবণ চাষী কল্যাণ সমিতির আয়োজনে চৌফলদন্ডী হাই স্কুল মাঠে এ মহাসমাবেশ অনুীষ।ঠত হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, লবণ চাষীরা সবসময় শোষিত হচ্ছে। তাই লবণ আমদানির পায়তারা করলে কক্সবাজার অচল করে দেয়া হবে।

সদর উপজেলা লবণ চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মাস্টার মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এতে প্রধান সমন্বয়কের বক্তব্য রাখেন লবণ চাষী কল্যাণ সমিতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহাব উদ্দীন।

বক্তারা এসময় লবণের আমদানি বন্ধ, মূল্য বৃদ্ধিসহ ১৩টি দাবী তুলে ধরেন। এসব দাবি আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তারা। সমাবেশে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের লবণ চাষি সমিতির নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

মৌসুম,লবণ চাষি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত