ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভয়াল ১২ নভেম্বর স্মরণে ভোলায় আলোচনা সভা ও র‌্যালি

ভয়াল ১২ নভেম্বর স্মরণে ভোলায় আলোচনা সভা ও র‌্যালি

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভয়াল প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় গোর্কি উপলক্ষ্যে ‘উপকূল দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে ভোলায় স্মরণসভা, আলোচনা ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১২ নভেম্বর) সকালে ভোলা প্রেসক্লাবে উপকূল ফাউন্ডেশন, ব-দ্বীপ ফোরাম, জাগরণ ফাউন্ডেশন, যুব রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভোলা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজকের ভোলা সম্পাদক আলহাজ্ব মুহাম্মদ শওকাত হোসেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সোপান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক, ভোলা সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসিফ আলতাফ, ভোলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ভোলা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক অ্যাড. ড. আমিরুল ইসলাম বাছেত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি জামিল হোসেন ওয়াদুদ।

ব-দ্বীপ ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী মীর মোশারেফ অমির সভাপতিত্বে এবং উপকূল ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব মো. আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন, সাবেক প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবু তাহের, দুদকের পিপি সাংবাদিক অ্যাড. সাহাদাত শাহিন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম, দৈনিক আজকের পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি শিমূল চৌধুরী, ক্যাব ভোলার সভাপতি মো. সোলাইমান, কবি ডা. মো. মহিউদ্দিন, উপকূল ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক এম শাহরিয়ার ঝিলন প্রমুখ।

আলোচনা শেষে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি র‍্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র‍্যালিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেন।

আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর তার বক্তব্যে ঘূর্ণিঝড় গোর্কির ভয়াবহতা তুলে ধরেন এবং এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "১৯৭০ সালের এই দিনে ঘূর্ণিঝড় গোর্কি আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনে এক চরম আঘাত হেনেছিল। আমরা সেই দিনের কথা ভুলিনি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও এই ইতিহাস জানাতে হবে, যাতে তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতন হতে পারে।"

এসময় অন্যান্য বক্তারা বলেন, এই ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে দক্ষিণাঞ্চলের ১০ লাখেরও মানুষ মারা গেছে। হাজার হাজার ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষিত হয়েছে। যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হয়ে আছে। দিনটি স্মরণে ভোলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভা ও র্যালিতে ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয় এবং ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

বক্তারা আরও বলেন, ১২ নভেম্বরের তাৎপর্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও জনসাধারণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন। তারা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, আশ্রয় কেন্দ্র বৃদ্ধি এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম জোরদার করার দাবি জানান।

বক্তারা আরও বলেন, ১৯৭০ সালের এই দিনে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় গোর্কির আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল। প্রায় ৪ লাখেরও বেশি ঘর-বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল এবং ৩৬ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। শুধু ভোলা জেলাতেই আনুমানিক ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। পুরো উপকূল এলাকায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ঘটনার ৫৫ বছর পরেও সেই দুঃসহ স্মৃতি দক্ষিণ জনপদের মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি।

১২ নভেম্বরের রাতে ঘূর্ণিঝড় গোর্কির তাণ্ডবে ভোলা সদর, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, মনপুরা, চর নিজাম, ঢালচর, কুকরি-মুকরিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল। স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, এমন কোনো গ্রাম ছিল না যেখানে কোনো না কোনো মানুষ মারা যায়নি। আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে অনেকে গাছে উঠে প্রাণ বাঁচিয়েছিল। ঘর-বাড়ি, ফসল ও প্রিয়জন হারিয়ে মানুষ শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ভয়াবহতা এতটাই নির্মম ছিল যে, সেই দিনের কথা মনে পড়লে আজও ভোলাবাসীর বুক ভয়ে কেঁপে ওঠে।

ভোলা,আলোচনা সভা,র‌্যালি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত