ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিওদের অবজ্ঞা করে ইউএনএইচসিআরের নীতি বাতিলের দাবি

কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিওদের অবজ্ঞা করে ইউএনএইচসিআরের নীতি বাতিলের দাবি

কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিওদের অবজ্ঞা করে ইউএনএইচসিআর-এর ২০২৬-২০২৯ সালের অংশীদারিত্ব নীতি বাতিলের দাবি জানিয়েছে কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরামের নেতৃবৃন্দ।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরামের সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষে এ দাবি জানান তারা।

তারা বলছেন, ইউএনএইচসিআর ২০২৫ সালের অক্টোবরে স্থানীয়করণ একটি গাইডলাইন প্রকাশ করে। যার মূল ভিত্তি হল স্থানীয় সংস্থাগুলোর সাথে সমতাভিত্তিক এবং মানসম্মত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এছাড়া সমতাভিত্তিক অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে ইউএনএইচসিআর ‘গ্র্যান্ড বার্গেইন’ ২০১৭ এবং ‘অংশীদারিত্বের নীতিমালা ২০০৭’-এর মতো বৈশ্বিক চুক্তিগুলোর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে স্থানীয়দের সমান অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন করা এবং স্থানীয়দের কাছে ক্ষমতা ও সম্পদ হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করা। যার প্রেক্ষিতে ইউএনএইচসিআর ২০২৫ সালে ১৬টি এনজিওকে অংশীদার হিসেবে যুক্ত করেছিল।

যাদের মধ্যে ২টি স্থানীয়, ৮টি জাতীয় এবং ৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থা ছিল। এর শতাংশের অনুপাত ছিল ১৩% স্থানীয়, ৫০% জাতীয় এবং ৩৮% আন্তর্জাতিক এনজিও। কিন্তু ২০২৬-২০২৯ সালের অংশীদারিত্বের জন্য ১২টি এনজিও অংশীদার নির্বাচন করেছে ইউএনএইচসিআর। যেখানে ০% স্থানীয়, ৭৫% জাতীয় এবং ২৫% আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে। এটি কক্সবাজার-ভিত্তিক স্থানীয় এনজিওদের সক্ষমতা ও সম্পৃক্ততাকে অস্বীকার ও অবমূল্যায়ন করেছে এবং এর মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত তাদের স্থানীয়করণ প্রতিশ্রুতির সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। তাই ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে এই অংশীদারিত্ব নীতি বাতিল করা না হলে কক্সবাজারের এনজিওদের সংগঠনের পক্ষে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, ইউএনএইচসিআর-এর লোকালাইজেশন রিপোর্ট ২০২৪ অনুযায়ী তাদের অর্থায়নে পরিচালিত অংশীদারদের ৮৭% ছিল স্থানীয় এবং জাতীয় সংস্থা এবং জুন ২০২৫ পর্যন্ত এটি দাঁড়িয়েছে ৮৫%-এ। তবে এই প্রতিবেদনের তথ্যের সাথে বাংলাদেশে ২০২৬ সালের জন্য নেওয়া অংশীদারিত্বের সিদ্ধান্তের তীব্র স্ববিরোধিতা রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী কার্যক্রমে ২০২৬-২০২৯ এর জন্য কক্সবাজারের কোনো স্থানীয় এনজিওকেই নির্বাচন করেনি। এর অর্থ হলো ২০২৬ সালে কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিওগুলোর সাথে ইউএনএইচসিআর-এর অর্থায়নের অংশীদারিত্ব থাকবে না। এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় সক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করে।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকে কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মানবিক সাড়া দানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তারা প্রথম সাড়া দানকারী হিসেবে কাজ করেছে এবং সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সহায়তা করেছে। আমরা এই কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর তহবিল সংগ্রহ এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা ও ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাই। তবে আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিপূরক অংশীদারিত্ব মডেল দাবি করি যেখানে স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো একসাথে কাজ করবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিওগুলোর সাথে তহবিলের জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। আইএনজিওগুলোর উচিত তাদের নিজ দেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ থেকে নয়।

অধিকার কক্সবাজার এর কর্মকর্তা এডভোকেট মোহাম্মদ মুসা বলেন, বিশ্বব্যাংক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য মৌলিক সেবা প্রদান এবং দুর্যোগ ও সামাজিক সহনশীলতা গড়ে তুলতে স্থানীয় মানুষের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ৩০০ মিলিয়ন ডলার অনুদানসহ মোট ৭০০ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। অথচ তারা এই বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় স্থানীয় এনজিও/সিএসও-গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। আমরা এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার প্রতিবাদ করি। স্থানীয় মানুষের জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে জাতিসংঘের একটি সংস্থা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করবে। আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি যে, এই আবাসনগুলো অবশ্যই প্রিফ্যাব্রিকেটেড (প্রাক-নির্মিত) ঘর হতে হবে; কোনো স্থায়ী কাঠামো তৈরির অনুমতি দেওয়া যাবে না। স্থানীয় সরকার এবং স্থানীয় এনজিও/সিএসও-দের সাথে পরামর্শ করে এর বিস্তারিত নকশা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।

সিআইএইচআরডিএফ-এর কর্মকর্তা ইলিয়াস মিয়া বলেন, কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়নে এই দারিদ্র্য ব্যবস্থাপনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতি চরম ঝুঁকির বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। বিপুল রোহিঙ্গা জনসংখ্যা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর তাদের চাপের কারণে এই সমস্যাগুলো আরও প্রকট হয়েছে। উখিয়া এবং টেকনাফে প্রতিদিন ২৫ মিলিয়ন লিটারেরও বেশি পানি ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে। উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় মানুষের ভবিষ্যৎ পানির নিশ্চয়তার জন্য এখনই ক্যাম্পে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করতে হবে এবং বিকল্প ব্যবস্থা চালু করতে হবে। নাফ নদীর পানিকে ট্রিটমেন্ট করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহ করতে হবে। ভূ-উপরিভাগের পুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

এতে হেলপ কক্সবাজার-এর কর্মকর্তা আবুল কাশেম, ইপসার কর্মকর্তা হোসনে আরা রেখা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কক্সবাজার,স্থানীয় এনজিও,ইউএনএইচসিআর,নীতি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত