
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বন্ধুদের ডাকে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে খুন হওয়া জয় সরকার (২৬) হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় করা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিকে প্রতিহিংসার বশে আসামি করা হয়েছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন এক ব্যবসায়ী।
নিহত জয় সরকার উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের চৌদ্দকাহনিয়া গ্রামের নূরু জামান মিয়ার ছেলে।
নিহতের পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ নভেম্বর বুধবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে জয়কে তার বন্ধু স্বাধীন, পান্নু ও দেলোয়ার টিকটক ভিডিও তৈরির কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নেন। পরে তাকে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের জমিতে নিয়ে একই গ্রামের বেকু হাসানের নেতৃত্বে ৮–১০ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে জয়কে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট বোন জান্নাতুল ফেরদৌস বাদী হয়ে গজারিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় বেকু হাসানকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ১০–১২ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার আসামি হিসেবে নাম থাকা ব্যবসায়ী ফজলুল করিম অভিযোগ করে বলেন, তিনি গত দুই বছর ধরে বাউশিয়া ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর এলাকায় পরিবারসহ ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন এবং ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। ঘটনার সময় তিনি নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই ছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, পূর্ববিরোধের জেরে তাকে ও তার ছেলে মাসুদ (২৫)কে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
ফজলুল করিম আরও অভিযোগ করেন, তার পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকলেও মামলায় নাম আসার পাশাপাশি চৌদ্দকাহনিয়া গ্রামে তার স্বজনদের ঘরের আসবাবপত্র বাদীপক্ষের লোকজন লুট করে নিয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নিহতের চাচা ফিরোজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘তারা নিজেরাই ঘরের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।’
মামলার বাদী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পরপরই আমরা মামলা করেছি। এই প্রযুক্তির যুগে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হওয়ার কথা নয়। অথচ এতদিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনাটি পূর্বশত্রুতার জেরে ঘটেছে বলে শোনা গেলেও এর পেছনে অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে। তাঁরা দ্রুত প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, মামলার প্রধান আসামি বেকু হাসানের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে জমি দখল, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। জয় হত্যাকাণ্ড ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে ৩–৪ জনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করার অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে সদ্য বিদায়ী গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহেও প্রধান আসামিসহ এজাহারভুক্তদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে কাউকে পাওয়া যায়নি।