অনলাইন সংস্করণ
১৫:২৫, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫
সরকার পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেওয়ার তিন দিন পরেও ঈশ্বরদীর হাটবাজারে দেখা মেলেনি আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের। এদিকে ঘোষণার পর রবিবার, সোমবার ও মঙ্গলবার টানা তিন দিন পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমে গেলেও বুধবার (১০ ডিসেম্বর) আবারও দাম বাড়তে শুরু করেছে।
ঈশ্বরদীর বাজারে এদিন মুড়িকাটা পেঁয়াজ কেজিতে ১০০ টাকা এবং দেশি পুরাতন পেঁয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এর আগে, গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সরকারের আমদানি ঘোষণার পরদিন রবিবার থেকে তিন দিন ঈশ্বরদীর বাজারে পেঁয়াজের দরপতন দেখা যায়। মুড়িকাটা পেঁয়াজ তখন মানভেদে খুচরায় ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এর আগের দুই দিন শুক্রবার ও শনিবার খুচরায় এই পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় পৌঁছেছিল। আমদানির ঘোষণার প্রভাবেই রোববার বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ে এবং খুচরায় দাম কমে আসে।
ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৭০ টাকায় কিনে খুচরায় ৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। পরদিন শুক্রবার বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ জায়গা থেকে দেশি পুরাতন পেঁয়াজ উধাও হয়ে যায়।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দেশি পুরাতন পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও শুক্রবার সকালে পাইকারিতে এই পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি। কারো কাছে থাকলেও দাম চাওয়া হচ্ছে কেজিতে ১৫০ টাকা। ফলে খুচরায় কোথাও কোথাও ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে।
অন্যদিকে সদ্য উঠে আসা মুড়িকাটা পেঁয়াজ বৃহস্পতিবার পাইকারিতে ৭০ টাকা ও খুচরায় ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও শুক্রবার তা পাইকারিতে ১০৫–১১০ টাকায় কিনতে হয়েছে এবং খুচরায় বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়।
এক দিনের ব্যবধানে দেশি পুরাতন ও মুড়িকাটা—উভয় পেঁয়াজের দামই কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। শনিবারও সেই দামই ছিল বাজারে।
বিক্রেতা, আড়তদার ও পাইকাররা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। ডিসেম্বর মাসে দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ দিকে থাকায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আগাম রোপণ করা মুড়িকাটা পেঁয়াজের বড় অংশ প্রথম বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের আবারও রোপণ করতে হয়, যা সরবরাহে প্রভাব ফেলেছে। সামান্য কিছু মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে এলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
তিন দিন স্থিতিশীলতার পর বুধবার আবারও কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা জুলফিকার, আমছার আলী ও মিন্টু আলী জানান, আজ পাবনার আতাইকুলা হাটে পাইকারিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ মনপ্রতি ৩৮০০ থেকে ৪০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা কেজিতে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। পরিবহন খরচসহ ঈশ্বরদীর মোকামে আনতে প্রতি কেজিতে দাম পড়ে ৯৮.৫০ টাকা থেকে ১০৩.৫০ টাকা। অথচ কয়েকদিন আগেও পাইকারিতে দাম ছিল মনপ্রতি ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
কৃষি বিভাগ জানায়, দেশে দু’ধাপে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়—মুড়িকাটা ও বীজ পেঁয়াজ। মুড়িকাটা পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না এবং মৌসুমে দ্রুত বাজারজাত করতে হয়। পরে একই জমিতে রোপণ করা বীজ পেঁয়াজ মাচা বা ঘরে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। ফলে বাজার এখন দেশি উৎপাদনের ওপরই নির্ভরশীল।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল মমিন জানান, অতিবৃষ্টির কারণে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ পর্যাপ্ত বাজারে আসেনি। কৃষিপণ্যের দাম কখনো কমে আবার বাড়ে—এটাই স্বাভাবিক।