ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রাজবাড়ীতে তিন ভাইয়ের মিশ্র ফল বাগানে কমলার বাম্পার ফলন

রাজবাড়ীতে তিন ভাইয়ের মিশ্র ফল বাগানে কমলার বাম্পার ফলন

নিবিড় পরিচর্যা, আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ও মানসম্মত চারার ব্যবহারে মিশ্র ফল বাগানে সাফল্যের জোয়ার বইছে রাজবাড়ীতে। জেলার সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চরবাগমারা এলাকার তিন ভাইয়ের প্রতিষ্ঠিত বাগানে এবার কমলার বাম্পার ফলন হয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, প্রতিটি গাছে গড়ে ২০ কেজির বেশি কমলা ধরেছে।

সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় বাগান থেকেই কেজিপ্রতি ২০০ টাকায় সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। খরচের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি লাভে উদ্যোক্তাদের মুখে এখন সাফল্যের হাসি।

মৃত আনোয়ার হোসেন বিশ্বাসের তিন ছেলে—সরোয়ার হোসেন বাবু, আজিজুর রহমান বিশ্বাস ও আরেক ভাই—২০২০ সালে করোনাকালীন অবসর সময়ে ইউটিউব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেন মিশ্র ফল বাগান। পারিবারিক ১০ একর জমিতে গড়ে ওঠা বাগানে বর্তমানে প্রায় ৫০০ ফলগাছ রয়েছে। এর মধ্যে চায়না ও দার্জিলিং জাতের প্রায় ৩০০ কমলা গাছই প্রধান আকর্ষণ। চার বছর ধরে গাছগুলো থেকে নিয়মিত ফল সংগ্রহ করছেন তারা।

বাগানে গেলে দেখা যায় দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের ভিড়। আশপাশের এলাকা ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন বিষমুক্ত কমলা কিনতে।

দর্শনার্থী মিতা নূর বলেন, “আমাদের বাড়ির পাশেই বাগান। প্রায়ই আসি। এখানকার ফল পুরোপুরি বিষমুক্ত, তাই নিশ্চিন্তে বাচ্চাদেরও খাওয়াই। যেকোনো সময় প্রয়োজন হলে সরাসরি বাগানেই চলে আসি ফল কিনতে।”

ক্রেতা কাজী জাহাঙ্গীর বলেন, “বাজারের অনেক ফলে ফরমালিন থাকে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে এখানকার প্রাকৃতিক কমলাই ভরসা। কয়েকদিন আগে ৫ কেজি কিনেছিলাম, আজ আবার নিতে এসেছি। এতো সুস্বাদু কমলা দেশের মাটিতে উৎপাদিত হতে পারে, বাগানটি না দেখলে বিশ্বাসই হতো না।”

বাগান মালিক আজিজুর রহমান বিশ্বাস বলেন, “একসময় জমিতে প্রচলিত ফসল করতাম, লাভ কম, ঝামেলা বেশি। এখন ফল বাগান থেকেই ভালো আয় হচ্ছে। বাজারে যেতে হয় না, মানুষ নিজেরাই এসে নিয়ে যায়।”

মূল উদ্যোক্তা সরোয়ার হোসেন বাবু জানান, “২০২০ সালে ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিন ভাই মিলে এটা শুরু করি। আমাদের সব ফলই বিষমুক্ত। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে। কমলা, মালটা, আঙুর, পেয়ারা—সবই উৎপাদন করি। পাশাপাশি নিজেরাই চারাও তৈরি করছি, যা জেলা-জেলায় উদ্যোক্তারা নিয়ে বাগান করছেন। তাদের পরামর্শসহ সহযোগিতা করছি। মানুষের কাছে বিশুদ্ধ ফল পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”

তিনি বলেন, “এই বছর প্রতিটি কমলা গাছে গড়ে ২০ কেজির বেশি ফল ধরেছে। এ বছর আমরা খুবই লাভবান হয়েছি।”

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান জানান, জেলায় মিশ্র ফল বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে চরবাগমারার তিন ভাইয়ের এই বাগানটি অন্যতম সফল উদাহরণ। তারা বিদেশি জাতের কমলা, মালটা, ড্রাগন ও আঙুরসহ উচ্চমানের চারা উৎপাদন করে অন্য কৃষকদের অনুপ্রাণিত করছেন।

বর্তমানে সদর উপজেলায় প্রায় ১৫টি মিশ্র ফল বাগান রয়েছে এবং প্রায় সব বাগান থেকেই এখন কমলা ও মালটা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ফল চাষ বাড়লে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে, আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।

করোনাকালীন সময়ে সময় কাটানোর ভাবনা থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ এখন স্থানীয় কৃষিতে অনুপ্রেরণার আরেক নাম। নিরাপদ, বিষমুক্ত ফল উৎপাদনে তারা এক অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে উঠেছেন। বাগানজুড়ে ঝুলে থাকা টসটসে কমলার রঙ তিন ভাইয়ের সাফল্যের উজ্জ্বল প্রতীক, যার সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে পুরো রাজবাড়ীজুড়ে।

কমলার বাম্পার ফলন,মিশ্র ফল বাগান,রাজবাড়ী
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত