অনলাইন সংস্করণ
১১:৫৬, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫
রাজশাহীর তানোরে গভীর নলকূপে পড়ে মৃত্যুবরণ করা দুই বছরের শিশু সাজিদের জানাজায় হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম। সকাল থেকেই মসজিদের মাইকে ঘোষণায় বারবার ভেসে এসেছে—কোয়েলহাট পূর্বপাড়া নিবাসী রাকিব উদ্দীনের শিশু সন্তান সাজিদ আর নেই। সেই ঘোষণার পর থেকেই গ্রামের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে কান্নায়।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নেককিড়ি কবরস্থান-সংলগ্ন মাঠে জানাজা শেষে সাজিদের দাফন সম্পন্ন হয়।
জানাজায় অংশ নিতে গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ সকালেই জমায়েত হন। কেউ মাঠে যাননি, দোকানপাটও খোলা হয়নি। সবাই পাঞ্জাবি গায়ে চাপিয়ে, মাথায় টুপি পরে সাজিদের বাড়ির দিকে ছুটে যান শেষবারের মতো শিশুটির মুখ একনজর দেখতে। প্রতিদিন যার মুখে ছিল হাসি, আজ সেখানে নিস্তব্ধতা।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পাঁচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে সাজিদের মরদেহ পৌঁছায়।
এর আগে, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গভীর নলকূপের ৪০ ফুট মাটি খনন করে টানা ৩২ ঘণ্টার অভিযানের পর রাত ৯টার দিকে তাকে উদ্ধার করেন। উদ্ধার শেষে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানাজার মাঠে মানুষের উপস্থিতি দেখার মতো ছিল। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া ছেলেরা—সবার চোখেই জল। কেউ ফিসফিস করে বলছিল, “আল্লাহ, এমন মৃত্যু কাউকে না দিন।” সাদা কাপড়ে মোড়ানো সাজিদের ছোট্ট নিথর দেহ যখন আনা হলো, তখন চারদিকে কান্নার রোল পড়ে যায়। শিশুটির মা বারবার ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করে আহাজারি করছিলেন; স্বজনরা তাকে ধরে রেখেছিল, কিন্তু কান্না থামাতে পারেনি কেউই।
জানাজার নামাজ পড়ান কাজী মাওলানা মিজানুর রহমান। নামাজ শেষে তাকবির ঘোষণার পর সবাই হাত তুলে দোয়া করেন—সাজিদের মাগফিরাত ও তার পরিবারের প্রতি ধৈর্য ধারণের তৌফিক কামনা করে।
জানাজা শেষে যখন সাজিদের ছোট্ট কফিন কবরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন যেন চারপাশের সব শব্দ থেমে যায়। শুধু শোনা যাচ্ছিল স্বজনদের কান্না। একটি শিশুর জানাজায় পুরো গ্রামের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ—এ দৃশ্য আগে দেখেননি গ্রামবাসী।
উল্লেখ্য, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তানোর উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে নিখোঁজ হয় সাজিদ। পরে ৩২ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযানের পর ফায়ার সার্ভিস তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।