অনলাইন সংস্করণ
২০:২৫, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
একীভূত হওয়া সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের আমানতকারীরা আগামী সপ্তাহ থেকে তাদের জমাকৃত অর্থ ফেরত পেতে শুরু করবেন। প্রাথমিকভাবে আমানত বিমা স্কিমের আওতায় গ্রাহকরা একবারে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানান, আমানত ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়াগত জটিলতা ছিল, তা দূর করা হয়েছে। ফলে আগামী সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো অর্থ পরিশোধ শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যমে ডজনখানেক ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ তুলে নেয়। এসব অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারির চাপেই ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে গভীর সংকটে পড়ে।
এই পরিস্থিতিতে সংকটে থাকা এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংককে একত্রিত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ গঠনের অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গ্রাহকরা নিজ নিজ ব্যাংকের শাখা থেকেই টাকা তুলতে পারবেন। তবে কোনো গ্রাহকের যদি একটি ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকে, তাহলে তিনি একটি হিসাব থেকেই অর্থ উত্তোলনের সুযোগ পাবেন। আর যদি একাধিক ব্যাংকে হিসাব থাকে, সেক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাংক থেকেই নির্ধারিত পরিমাণ টাকা তোলা যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যেসব গ্রাহকের হিসাবে দুই লাখ টাকা বা এর কম জমা রয়েছে, স্কিম কার্যকর হওয়ার পর তারা পুরো অর্থ একবারেই তুলতে পারবেন। আর যাদের হিসাবে দুই লাখ টাকার বেশি রয়েছে, তারা প্রতি তিন মাস অন্তর সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করে দুই বছর পর্যন্ত টাকা তুলতে পারবেন।
তবে ৬০ বছরের বেশি বয়সী গ্রাহক কিংবা ক্যানসার বা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত আমানতকারীদের ক্ষেত্রে এই সীমা শিথিল রাখা হয়েছে। তারা প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।
একীভূত হয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় রাজধানীর সেনা কল্যাণ ভবনে স্থাপন করা হয়েছে। নতুন ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং আমানতকারীদের শেয়ার থেকে আসবে বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা। অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই পাঁচ ব্যাংকে বর্তমানে প্রায় ৭৫ লাখ আমানতকারীর মোট জমা রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যার বড় একটি অংশ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে।
সারা দেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে।
একীভূত হওয়ার পর একই এলাকার একাধিক শাখা একীভূত করে একটি বা দুটি শাখা রাখা হবে। ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় কমাতে এরই মধ্যে কর্মীদের বেতন–ভাতা ২০ শতাংশ কমানো হয়েছে।
