অনলাইন সংস্করণ
১৯:৩৩, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট বুধবার দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় একটি সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করেছে, যা সেনাপ্রধানকে আরও ক্ষমতাবান করবে এবং প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের আজীবন দায়মুক্তি দেবে। এই ২৭তম সংশোধনী বিলের ফলে দেশটিতে গণতন্ত্র এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
সংসোধনীর মাধ্যমে “চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস” নামে একটি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যেখানে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ক্ষমতা একীভূত হবে।
পাশাপাশি একটি ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত গঠন করা হবে, যা সংবিধান সংক্রান্ত মামলা পরিচালনা করবে। বিলের বিপক্ষে মাত্র চারজন আইনপ্রণেতা ভোট দিয়েছেন। দুই দিন আগে সিনেটেও এটি পাস হয়।
নতুন আইন অনুসারে সেনাপ্রধান আসিম মুনির আনুষ্ঠানিকভাবে তিন বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হবেন। গত মে মাসে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার পর তিনি ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হয়েছিলেন। নতুন আইনে বলা হয়েছে, ফিল্ড মার্শাল, এয়ার মার্শাল বা অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট পদে উন্নীত কর্মকর্তারা আজীবন মর্যাদা ও সুবিধা ভোগ করবেন এবং ফৌজদারি মামলার দায় থেকে মুক্ত থাকবেন। আগে এই দায়মুক্তি কেবল রাষ্ট্রপতির জন্য সংরক্ষিত ছিল।
আইনজীবী ওসামা মালিক বলেন, ‘এই সাংবিধানিক সংশোধনী সামরিক কর্তৃত্ব বাড়াবে এবং গণতন্ত্রের যে সামান্য অবশিষ্ট কাঠামো ছিল, তা কার্যত বিলীন হয়ে যাবে। এটি বেসামরিক তদারকির ক্ষমতা সরিয়ে দিয়ে সামরিক কাঠামোর ভারসাম্যকেও নষ্ট করবে।’
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই সংশোধনীকে প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য এবং জাতীয় ঐক্যের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বীরদের যথাযথ সম্মান জানানোই এই পরিবর্তনের লক্ষ্য।’
তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই পরিবর্তন কার্যত ক্ষমতাকে সামরিক বাহিনী ও সরকার-সমর্থিত গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত করবে। নতুন ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত সুপ্রিম কোর্টের পরিবর্তে সংবিধানসংক্রান্ত মামলা পরিচালনা করবে, যার বিচারক নিয়োগ দেবে সরকার।
বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বিলের প্রতিবাদে ভোটাভুটির আগে পার্লামেন্ট ত্যাগ করেছে। পিটিআই মুখপাত্র জুলফিকার বুখারি বলেছেন, ‘গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থার যে ক্ষতি হলো তাতে পাকিস্তান আরও দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’
সংবিধান বিশেষজ্ঞ আসাদ রহিম খান সতর্ক করেছেন, ‘বিচার বিভাগের ওপর এমন আঘাত গত শতাব্দীতে দেখা যায়নি। যারা এখন বিল পাসে উল্লাস করছে, একসময় তারাই ন্যায়বিচারের জন্য সেই আদালতের কাছেই ফিরবে।’