অনলাইন সংস্করণ
১১:১৬, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫
চব্বিশের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, তাদের দল আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না তুললে সমর্থকেরা আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন “ঠেকিয়ে দেবে”। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, পরিস্থিতি এমন হলে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিতে পারে।
রোববার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত জয় এসব মন্তব্য করেন।
এটি এসেছে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার রায়ের ঠিক আগমুহূর্তে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার ওই মামলার রায় ঘোষণা করবে।
৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশনা, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’-সহ মোট পাঁচ অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে প্রসিকিউশন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন এবং আদালতের দৃষ্টিতে পলাতক হওয়ায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি।
তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
রয়টার্সকে জয় বলেন, ভারত তার মাকে রাষ্ট্রপ্রধানের মতো নিরাপত্তা দিচ্ছে। “আমরা খুব ভালোভাবেই জানি রায় কী হবে… তারা তাকে দোষী সাব্যস্ত করবে, আর সম্ভবত মৃত্যুদণ্ড দেবে। আমার মায়ের কী করতে পারবে তারা? আমার মা ভারতে নিরাপদ।”
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সরকারপ্রধানের দপ্তরের মুখপাত্র সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। অক্টোবরের এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তিনি দিল্লিতে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে সতর্ক থাকতে হয়।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের অধিকাংশ সদস্য হত্যার পর শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানাকে দীর্ঘদিন ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়। সম্প্রতি আরেক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে দোষী সাব্যস্ত করবে, তা “অবধারিত”, কারণ এটি তার ভাষায় “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রহসন”।
জয় বলেন, আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচনের ব্যবস্থা হলে তারা আপিল করবেন না। কারণ আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম বর্তমানে নিষিদ্ধ এবং নির্বাচন কমিশন দলের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। ফলে আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারবে না।
জয়ের ভাষায়, “আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন আমরা হতে দেব না। আমাদের বিক্ষোভ আরও তীব্র হবে। যা দরকার তাই করব আমরা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছু না করলে নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে… সংঘাত হবেই।”
এরই মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রায়কে ঘিরে বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এসব নাশকতায় জড়িতদের গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার পুলিশ প্রধান। প্রতিদিনই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে; রাজধানীতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যদের টহলও জোরদার করা হয়েছে।
জয় জানান, তিনি এবং তার মা আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তবে অন্তর্বর্তী সরকার বা বিএনপির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই। “গত কয়েক দিন দেখছেন—সারা দেশে শাটডাউন, বড় বড় বিক্ষোভ। এগুলো আরও বড় হবে।”
রয়টার্স বলছে, দীর্ঘ দেড় দশকে ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনা যেমন অর্থনীতিকে বদলে দেওয়ার কৃতিত্ব পেয়েছেন, তেমনি মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দমন–পীড়নের অভিযোগে সমালোচিত হয়েছেন। তার সময়ে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে দুটি অধিকাংশ বিরোধী দল বর্জন করেছিল। সেই সময়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরও বিভিন্ন সময়ে কারাবরণ করতে হয়েছে।
জয় সাক্ষাৎকারে বলেন, “তিনি (হাসিনা) হতাশ, রাগান্বিত, ক্ষুব্ধ। আর আমরা সবাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ—যে কোনো উপায়ে লড়াই চালিয়ে যাব।”