ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ব্যবসায়ীদের জন্য ইসলামের নীতিমালা

ব্যবসায়ীদের জন্য ইসলামের নীতিমালা

আমরা বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করি। এর মধ্যে ব্যবসা উত্তম ও শ্রেষ্ঠ পন্থা। এরশাদ হচ্ছে, ‘নিজের পালনকর্তার কাছে রিজিক অন্বেষণ করাতে কোনো অসুবিধা নেই।’ (সুরা বাকারা : ১৯৮)। তবে এর জন্য কিছু নীতিমালা রয়েছে; যা আদর্শ ব্যবসায়ীর জন্য মেনে চলা কর্তব্য।

হারাম বস্তু বেচাকেনা না করা : হারাম বস্তুতে লাভ বেশি হলেও সেদিকে অগ্রসর না হওয়া কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘একশ্রেণির লোক আছে, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অন্ধভাবে অবাস্তব কথাবার্তা সংগ্রহ করে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা লোকমান : ৬)।

ব্যবসায় কারও ক্ষতি না করা : ব্যবসায় মানুষের উপকারের মানসিকতা রাখতে হবে। কারও ক্ষতি যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা অন্যের ক্ষতি করা কোনোটিই উচিত নয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৩৪১)।

ধোঁকা-প্রতারণা ও ফাঁকিবাজি না করা : মন্দ জিনিস ভালো বলে চালিয়ে দেওয়া, ভালোর সঙ্গে মন্দের মিশ্রণ করে ধোঁকা দেওয়া হারাম। একদিন রাসুল (সা.) বাজারে গিয়ে একজন খাদ্য বিক্রেতার পাশ কেটে যাচ্ছিলেন। তিনি খাদ্যের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দেখলেন, ভেতরের খাদ্যগুলো নিম্নমানের। রাসুল (সা.) বললেন, ‘এটা কি?’ লোকটি বলল, ‘এতে বৃষ্টি পড়েছিল।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি সেটা খাবারের ওপরে রাখলে না কেন; যেন লোকেরা দেখতে পারে? যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মত নয়।’ (মুসলিম : ১০২)।

ওজনে নিজ স্বার্থরক্ষায় কমবেশি না করা : অন্যকে পণ্য দেওয়ার সময় ওজনে কম দেওয়া, আর নেওয়ার সময় বেশি করে নেওয়া জঘন্য অপরাধ। আল্লাহ বলেন, ‘যারা পরিমাপে কম দেয়, তাদের জন্য ধ্বংস; যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে; আর যখন তাদের মেপে বা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়।’ (সুরা মুতাফফিফিন : ১-৩)।

পণ্য বিক্রির জন্য মিথ্যা শপথ না করা : মিথ্যা বলে বা মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রির পরিণতি খুবই ভয়াবহ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে আল্লাহতায়ালা তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। তাদের একজন হলো, যে তার ব্যবসায়িক পণ্যকে মিথ্যা কসম করে বিক্রি করে।’ (মুসলিম : ১০৬)।

মালিকানাহীন জিনিস বেচাকেনা না করা : হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) আমাকে এমন বস্তু বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন, যা আমার কাছে নেই।’ (তিরমিজি : ১২৩৫)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো খাবার ক্রয় করে, তা ওই সময় পর্যন্ত বিক্রি করবে না, যতক্ষণ না বস্তুটি পুরোপুরি আয়ত্তে আসে।’ (বোখারি : ২১৩৬)।

ক্রেতাকে সঠিক পরামর্শ দেওয়া : অনেক সময় ক্রেতা বা গ্রাহক অনভিজ্ঞ হওয়ায় ব্যবসায়ীর কাছে পরামর্শ চায়। ভালো জিনিস বাছাই করে দিতে বলে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতা বা গ্রাহককে সঠিক পরামর্শ দেওয়া কর্তব্য। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়, সে আমানতদার।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৭৪৫)।

দাম নির্ধারণ করা ও অস্পষ্ট না রাখা : নগদ বা বাকিতে বিক্রীত বস্তু ও দাম নির্ধারিত হতে হবে। পরস্পর সন্তুষ্টিতে পণ্য ও মূল্য বিনিময় করতে রাজি থাকতে হবে। অজানা ও অনির্ধারিত মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয় শুদ্ধ হবে না। কেননা, এ ক্ষেত্রে একে শরিয়তের পরিভাষায় ক্রয়-বিক্রয় বলা হবে না। (ফিকহুস সুন্নাহ : ৮৯৮)।

বাকি লেনদেন লিখে রাখা : ব্যবসায় বাকিতে লেনদেন হলে লিখে রাখা অবশ্য কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে স্পষ্ট করে উভয় পক্ষের নাম, মূল্য পরিশোধের সময় ও পরিশোধের পদ্ধতি লিখে নিতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মোমিনগণ! যখন তোমরা পরস্পর কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাকিতে কোনো লেনদেন করো, তখন তা লিখে রাখো। এটা প্রমাণপত্র লেখার নির্দেশ।’ (সুরা বাকারা : ২৮২)।

ব্যবসায়ী,ইসলাম,নীতিমালা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত