ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আল্লাহর ক্ষমা পাবেন যারা

আল্লাহর ক্ষমা পাবেন যারা

আল্লাহ বড়ই মেহেরবান, ক্ষমাশীল। তিনি চান না তাঁর একটি বান্দাও জাহান্নামের আগুনে জ্বলুক। কেনই বা চাইবেন? তিনি যে বান্দাকে বড় ভালোবাসেন। চাঁদের চেয়ে অধিক সৌন্দর্যে, ফুলের চেয়েও অধিক শোভাবর্ধনে যে মানুষকে তিনি শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরিয়েছেন। সেই মানুষকে তিনি কিভাবে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ করবেন?

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা রাতে তাঁর (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনে যারা পাপ করেছে; তারা তওবা করতে পারে। আর দিনে তাঁর (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন, যাতে রাতে যারা পাপ করেছে; তারা তওবা করতে পারে। এভাবে চলতে থাকে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়া পর্যন্ত।’ (মুসলিম : ২৭৫৯)।

আল্লাহ তাদেরই ক্ষমা করবেন, যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা। আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের কখনোই জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ করবেন না। তবে এই প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য নেকআমল করা শর্ত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের প্রতিপালকের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’ (সুরা ফুরকান : ৬৩-৬৪)।

আমরা একটু চেষ্টা করলেই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি। শেষ রাতে দুই চার রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারি। আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে যদি এভাবে বলি, ওগো আল্লাহ, আমি অতিশয় দুর্বল। তুমি মহা শক্তিধর। তেমনি ক্ষমাশীল। আমার দুর্বলতাই আমার ভুলের কারণ। তোমার ইবাদতে উদাসীনতা, তোমার দেখানো পথ থেকে দুরে সরে যাওয়া, পদস্থলন ও ত্রুটিবিচ্যুতি এই সবই আমায় জাহান্নামের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। রাব্বুল আলামিন। তুমি দয়ার সাগর। তোমার দয়া, তোমার অনুগ্রহই শুধু আমাকে এই জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে পারে।’

এভাবে কায়মানোবাক্যে ক্ষমা চাইলে আল্লাহতায়ালা বান্দার পাহাড়ের চেয়েও উঁচু আর সাগরের ফেনারাশির চেয়ে বেশি পাপও ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘বলুন হে আমার বান্দারা, যারা নিজ সত্তার ওপর সীমালঙ্ঘন করেছ, আল্লাহ রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল। পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার : ৫৩)।

নামাজি ব্যক্তিদের আল্লাহ ক্ষমা করবেন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, তাদের তো গোনাহ থাকারই কথা না। কেননা, যারা প্রকৃত নামাজি তারা যেমন নামাজ পড়ে, তেমনি পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। আবার প্রতি নামাজেই গোনাহ থেকে ক্ষমা চায়। তবুও যদি কোনো কারণে গোনাহ হয়েই যায়, আল্লাহতায়ালা নামাজের মাধ্যমে বান্দার গোনাহগুলো মাফ করে দেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা, এক রমজান থেকে আরেক রমজান এর মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহকে মিটিয়ে দেয়; যদি ওই ব্যক্তি কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (মুসলিম : ২৩৩)।

আল্লাহ তাওবাকারী ক্ষমা করেন। মানুষ তো গোনাহের পুতুল। শয়তানের দীর্ঘ প্রচেষ্টা, প্রবঞ্চনায় প্রতারিত হয়ে মোমিন যদি গোনাহর কাজে জড়িয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করতে হবে। তওবা এমনই এক পরশপাথর, যার মাধ্যমে মহাপাপীও গুনাহমুক্ত হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে, ‘গুনাহ থেকে তাওবাকারী, গুনাহমুক্ত ব্যক্তির মতো।’ (ইবনে মাজাহ : ৪২৫০)।

এজন্যই নবীজি (সা.) তাওবার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। আমাদের প্রতিনিয়ত তওবা করা উচিত। আর এমন তওবা করতে হবে, যে তওবায় অনুতপ্তের আবেগ থাকতে হবে। যে আবেগে বুকে ঢেউ উঠবে, সেই ঢেউ চোখের কূলে আছড়ে পড়তেই আল্লাহতায়ালা বান্দার সব পাপ ক্ষমা করে দেন।

এছাড়াও যাদের ঈমানপ্রদীপ একেবারে নিভে যায়নি। সমস্ত অহম, গরিমা ঝেড়ে ফেলে নিজেকে তুচ্ছ করে রবের কাছে পেশ করেন। দান-সদকা ও ভালো কাজের বিনিময়ে আল্লাহ যাদের ক্ষমা করবেন, তাদের পরিচয় প্রদানে পবিত্র কোরআনে এরাশদ হয়েছে, ‘আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পরুষ ও নারী, রোজাপালনকারী পুরুষ ও নারী, যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারীদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান রেখেছেন।’ (সুরা আহজাব : ৩৫)।

লেখক : খতিব, কসবা জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

আল্লাহ,ক্ষমা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত