ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অপচয় ও অপব্যয় রোধে নির্দেশনা

অপচয় ও অপব্যয় রোধে নির্দেশনা

আল্লাহ পৃথিবীকে আমাদের প্রয়োজনীয় বস্তু দ্বারা সুশোভিত করেছেন। তিনি অপচয় ও অপব্যয়কে নিষিদ্ধ করে প্রতিটি বস্তুর সঠিক ও পরিমিত ব্যবহার করতে বলেছেন। ইসলামে সবকিছুর ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখ, যারা অপব্যয় করে, তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৬-২৭)।

ইসলাম যেমন হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জনের নির্দেশ দিয়েছে, তেমন উপার্জিত অর্থ-সম্পদ বৈধ পথে ব্যয় করারও নির্দেশ দিয়েছে। মানবসমাজে অর্থ ও সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যয় বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অথচ ইসলাম এটিকে স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা এগুলোর ফল খাও, যখন তা ফলবন্ত হয় এবং এগুলোর হক আদায় কর ফসল কাটার দিন। তবে অপচয় করও না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আনআম : ১৪১)। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘অনর্থক কাজে এক দিরহামও খরচ করা অপচয়।’ (আল-জামে লি আহকামিল কোরআন : ১৩/৭৩)।

অপচয় ও অপব্যয়ের কারণ : অপচয় ও অপব্যয়ের বহু কারণ রয়েছে। কয়েকটি মৌলিক কারণ হলো-

১. ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা : ইসলাম মানুষকে বিভিন্নভাবে অপচয় ও অপব্যয় করতে নিষেধ করেছে। অজ্ঞতার বশবর্তী হয়েই মূলত মানুষ অপচয় করে থাকে। কোনো ব্যক্তি কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞানে পারদর্শী হলে তার দ্বারা অপচয় করা সম্ভব হতো না। আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান কর এবং পানাহার কর; কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ : ৩১)। অপচয়কারীকে দুনিয়াতে আফসোস ও লজ্জিত হতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমার হাত গলায় বেড়ি করে রেখ না (অর্থাৎ কৃপণ হয়ো না) এবং তাকে একেবারে খুলেও দিও না (অর্থাৎ অপচয় করো না)। তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে যাবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৯)। অপচয়কারীর জন্য আখেরাতে রয়েছে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ বলেন, ‘বামপাশের দল কতই না হতভাগ্য, তারা থাকবে উত্তপ্ত বায়ু ও ফুটন্ত পানির মধ্যে। যা শীতল নয় বা আরামদায়ক নয়। এর আগে তারা ছিল ভোগবিলাসে মত্ত। (সুরা ওয়াকিআহ : ৪১-৪৫)। অপচয়কারীর ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতার ফলাফল হলো, বৈধ জিনিস গ্রহণ করতে সে সীমালংঘন করে। এটাই তাকে শারীরিক ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। এ কারণে অলসতা তার ওপর চেপে বসে। ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমরা সীমাতিরিক্ত পানাহার থেকে সাবধান থাক। কেননা, অতিরিক্ত পানাহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর, অকর্মন্যতা আনয়নকারী ও নামাজ থেকে অলসকারী। তোমরা পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। কেননা, পরিমিত পানাহার শরীরের জন্য উপকারী এবং অপচয় থেকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে।’ (আল-আদাবুশ শারইয়্যাহ : ২/২০১)।

২. পারিবারিক প্রভাব : মানুষ শিশুকালে তার পিতামাতার আচরণে প্রভাবিত হয়। পিতামাতা যদি অপচয়কারী হয়, তাহলে সন্তানও অপচয়ের শিক্ষা গ্রহণ করে। তাই অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাত তথা ইসলামের ওপর জন্ম নেয়। এরপর তার পিতামাতা তাকে ইহুদি, খ্রিষ্টান বা অগ্নিপূজক বানায়।’ (বোখারি : ১৩৮৫, সহিহুল জামে : ৪৫৫৯)।

৩. অপচয়কারীদের সাহচর্য : অপচয়ের অন্যতম কারণ হলো, অপচয়কারীদের সঙ্গ ও সাহচর্য। কেননা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ তার সঙ্গীর চরিত্র গ্রহণ করে থাকে। তাই সঙ্গী অপচয়কারী হলে তার অন্যান্য সঙ্গীরাও তার দ্বারা প্রভাবিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তার সঙ্গীর ধর্ম গ্রহণ করে। সুতরাং তোমরা সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবে।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৮৩৩)।

অপচয় ও অপব্যয়ের যত ক্ষতি : অপচয় ও অপব্যয়ের অনেক ক্ষতি রয়েছে, যেগুলো ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, এমনকি আন্তর্জাতিক ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। অযথা খরচ দুনিয়ার ব্যবস্থাপনাকে যেমন বিশৃঙ্খল করে, তেমনি ব্যক্তির পরকালও নষ্ট করে। যেমন-

১. হারাম উপার্জনে উদ্বুদ্ধ হয় : অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে অনেক সময় মানুষ অর্থসংকটে পড়ে যায়। তখন সংসারের আবশ্যকীয় ব্যয় নির্বাহ করা তার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সে হারাম উপার্জনের দিকে ধাবিত হয়। অথচ হারাম খাদ্যে গঠিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক হারাম দ্বারা গঠিত শরীরের জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত স্থান।’ (সহিহুল জামে : ৪৫১৯)।

২. পাপের চর্চা হয় : অপচয়ের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। সে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যবহার করে এবং তার আনুগত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। ফলে সে হারাম পথে অর্থ ব্যয় করতে উদ্যত হয়। যেমন- মদ, জুয়া, লটারি, ধূমপানসহ সবধরনের নেশাদ্রব্য পান, যাত্রা, আনন্দমেলা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি। এর মাধ্যমে সময় ও অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি পাপের চর্চা হয়। উপরন্তু ইসলামের নির্দেশনার বাইরে অতি ভোজনের মাধ্যমে নিজেই নিজের ক্ষতি ডেকে আনে। অথচ ইসলাম অপচয় না করে পরিমিত খাদ্য গ্রহণের সুন্দর নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আদম সন্তান তার পেটের তুলনায় অন্য কোনো খারাপ পাত্র ভর্তি করে না। মানুষের জন্য তো কয়েক লোকমা খাদ্যই যথেষ্ট, যা তার মেরুদণ্ডকে সোজা করে রাখবে। আর যদি একান্তই প্রয়োজন হয়, তাহলে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয় আর এক-তৃতীয়াংশ নিঃশ্বাসের জন্য রাখবে।’ (তিরমিজি : ২৩৮০, সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৩৪৯)।

অপচয় ও অপব্যয়ের প্রতিকার : ইসলামের সৌন্দর্যই হলো মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। ইসলাম যেভাবে অপচয়কে নিষেধ করেছে, তেমনি কৃপণতাকেও নিষেধ করেছে। এজন্যই কোরআন-হাদিসে মুসলমানদের পানাহার, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাসস্থান, সৌন্দর্য, যোগাযোগের মাধ্যম, বিয়েশাদি সবকিছুতেই সীমারেখা চিহ্নিত করা হয়েছে। অপচয় ও অপব্যয় রোধে করণীয় হলো-

১. মধ্যপন্থা অবলম্বন : এটি হলো অপচয় ও কৃপণতার মাঝামাঝি অবস্থা। কিন্তু অধিকাংশ লোক এ নীতির প্রতিফলন ঘটায় না। অথচ ইসলাম মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ মোমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না বা কৃপণতা করে না। বরং তারা এ দুয়ের মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকে।’ (সুরা ফোরকান : ৬৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা খাও, পান কর, দান-সদকা কর এবং পরিধান কর, তবে অহংকার ও অপচয় ছাড়া।’ (মুসনাদে আহমদ : ৬৬৯৫)।

২. অহংকার না করা : অপচয় ও অপব্যয়ের অন্যতম কারণ অহংকার। সাধারণত অহংকারবশেই মানুষ প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যয় করে; যা অপচয়ের শামিল। অথচ অহংকার দেখানোর জন্য সম্পদ ব্যয়কে ইসলাম অনুমোদন করে না। আল্লাহ বলেন, ‘হে মোমিনরা! খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানগুলো বিনষ্ট করো না। সেই ব্যক্তির মতো, যে তার ধনসম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য এবং সে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না। ওই ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরখণ্ডের মতো, যার ওপরে কিছু মাটি জমেছিল। এরপর সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হলো এবং তাকে পরিষ্কার করে রেখে গেল। এভাবে তারা যা কিছু উপার্জন করে, সেখান থেকে কোনোই সুফল তারা পায় না। আসলে আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সুপথ দেখান না।’ (সুরা বাকারা : ২৬৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অহংকারবশত তার কাপড় (টাখনুর নিচে) ঝুলিয়ে পরে (কেয়ামতের দিন) আল্লাহ ওই ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না।’ (বোখারি : ৫৭৮৩)।

৩. বিলাসবহুল জীবনযাপন ত্যাগ করা : দুনিয়ার চাকচিক্য ও বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে না দেওয়া চাই। অহেতুক বিলাসিতাকে ইসলাম সমর্থন করে না। আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমি কোনো জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি, তখন আমি সেখানকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নির্দেশ দিই। তারা সেখানে পাপাচারে মেতে ওঠে। ফলে তার ওপর শাস্তি অবধারিত হয়ে যায়। এরপর আমি ওটাকে বিধ্বস্ত করে দিই।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ১৬)।

৪. দুনিয়া বিমুখতা : নবী-রাসুলরা এ গুণের অধিকারী ছিলেন। এ গুণের অধিকারী হতে হলে অবশ্যই নিজের চাহিদাকে সংবরণ করতে হয় এবং নিজের ওপরে অন্যকে প্রাধান্য দিতে হয়। আর অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা অনেক কল্যাণকর। আল্লাহ বলেন, ‘যারা মুহাজিরদের আসার আগে এ নগরীতে বসবাস করত এবং ঈমান এনেছিল, যারা মুহাজিরদের ভালোবাসে এবং তাদেরকে গণিমত থেকে যা দেওয়া হয়েছে, তাতে তারা নিজেদের মনে কোনোরূপ আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। আর তারা নিজেদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তাদেরই রয়েছে অভাব। মূলত যারা হৃদয়ের কার্পণ্য হতে মুক্ত, তারাই সফলকাম।’ (সুরা হাশর : ৯)।

৫. উপার্জনে সতর্কতা অবলম্বন : জীবিকা উপার্জন ভালোভাবে বুঝেশুনে করা চাই। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত; কিছুসংখ্যক আনসার সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কিছু চাইলে তিনি তাদের দিলেন। আবার তারা চাইলে তিনি তাদের দিলেন। এমনকি তার কাছে যা ছিল, সবই শেষ হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, ‘আমার কাছে যে সম্পদ থাকে, তা তোমাদের না দিয়ে আমার কাছে জমা রাখি না। তবে যে চাওয়া থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন। আর যে পরমুখাপেক্ষী হয় না, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তাকে সবর দান করেন। সবরের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোনো নেয়ামত কাউকে দেওয়া হয়নি।’ (বোখারি : ১৪৬৯)। সুতরাং মনের দিক থেকে অল্পেতুষ্ট থাকা, কারো কাছে হাত না পাতা এবং ধৈর্যধারণ করা চাই। আর শারীরিক দিক থেকে কাম্য হলো, কাজ করে হালাল পথে জীবিকা উপার্জন করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ তার রশি নিয়ে জঙ্গল থেকে কাঠ সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে বাজারে যায়, তারপর সেখানে তা বিক্রি করে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন। এটা মানুষের কাছে তার হাত পাতার চেয়ে উত্তম। কারণ, মানুষ তাকে কিছু দিতেও পারে, নাও দিতে পারে।’ (বোখারি : ১৪৭১)।

৬. নিজস্ব আয়ে খরচ করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একটি বিছানা স্বামীর জন্য, আরেকটি স্ত্রীর জন্য, তৃতীয়টি মেহমানের জন্য আর চতুর্থটি শয়তানের জন্য।’ (মুসলিম : ৫৫৭৩)। এর উদ্দেশ্য হলো, খরচ কম করা। যাতে ঋণ করতে অন্যের দারস্থ হতে না হয় এবং নিজের সম্পদ দ্বারাই যেন নিজের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হয়।

৭. দানের অভ্যাস করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিচের হাতের চেয়ে ওপরের হাত উত্তম। ওপরের হাত হচ্ছে দাতা আর নিচের হাত হচ্ছে গ্রহীতা।’ (বোখারি : ১৪২৯)। এ হাদিসের উদ্দেশ্য হলো, সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর করা; যাতে দানকারীর সংখ্যা বেশি হয় এবং গ্রহণকারীর সংখ্যা হ্রাস পায়।

লেখক : আলেম গবেষক, প্রাবন্ধিক ও গণমাধ্যমকর্মী

অপচয়,অপব্যয়,রোধ,মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ,ইসলাম
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত