অনলাইন সংস্করণ
১৭:১৪, ২৯ আগস্ট, ২০২৫
প্রতিবেশী ছাড়া জীবনযাপন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের বাঁধনটা দুর্বল হয়ে পড়লে মানবজীবন তার স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও তার হক আদায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, কিছুকেই তাঁর শরিক করো না এবং মাতাপিতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সাথি, মুসাফির এবং তোমাদের আয়ত্তাধীন দাস-দাসীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ওই লোককে ভালোবাসেন না, যে অহংকারী, দাম্ভিক।’ (সুরা নিসা : ৩৬)।
যে প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে, সে নিজের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনে। আর যে তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সদয় হয়, তার ঘরে বরকত নেমে আসে। প্রতিবেশীর সম্মানের মধ্যে রয়েছে—তার প্রতি সদয় থাকা, আস্থা রাখা, দোষত্রুটি ঢেকে রাখা, স্খলন ক্ষমা করা, পদস্খলনকে বর্জন করা, পবিত্রতা ও চুক্তি রক্ষা করা, উপদেশ দেওয়া এবং সাহায্যে সাড়া দেওয়া ও প্রতিদান দেওয়া। আবু শুরাহ (রা.) বলেন, ‘আমার দুই কান শ্রবণ করেছে, আমার দুই চক্ষু প্রত্যক্ষ করেছে যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং আখেরাতে বিশ্বাস রাখে, সে যেন স্বীয় প্রতিবেশীকে সম্মান করে।’ (বোখারি : ৬০১৮)।
প্রকৃত মোমিন হওয়ার জন্য প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা নৈতিক দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ! সে প্রকৃত মোমিন নয়। আল্লাহর শপথ! সে প্রকৃত মোমিন নয়। আল্লাহর শপথ! সে প্রকৃত মোমিন নয়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কার কথা বলছেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যার অনিষ্টতা থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ (বোখারি : ৬০১৬)।
প্রতিবেশী পাশাপাশি থাকার কারণে একে অপরের ভালো-মন্দ জানে। প্রতিবেশীর গোপন বিষয় নিঃসন্দেহে আমানত। এটা ঢেকে রাখা জরুরি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে তার মুসলিম ভাইয়ের দোষ ঢেকে রাখে, আল্লাহও কেয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।’ (মুসলিম : ২৫৮০)।
প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেওয়া, তার প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করা, দুর্দিনে তার পাশে দাঁড়ানো ও সহযোগিতা করা মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার আবু জর (রা.)-কে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে আবু জর, ঘরে তরকারি রান্নাকালে ঝোলের পানি বাড়িয়ে দাও এবং তোমার প্রতিবেশীর খোঁজখবর নাও।’ (মুসলিম : ২৬২৫)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে উদর পূর্ণ করে খায়। অথচ তার পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (শুয়াবুল ঈমান : ৯০৯০)।
প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়া সওয়াবের কাজ। কেউ কোনো কিছু হাদিয়া দিলে তুচ্ছ মনে করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে মুসলিম নারীরা, কোনো পড়শি যেন অপর পড়শির (সে দাতা হোক কিংবা গ্রহণকারী) ছাগলের খুর পরিমাণ হাদিয়াও তুচ্ছ মনে না করে।’ (মুসলিম : ১০৩০)।
প্রতিবেশীকে সালাম দেওয়া, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, প্রয়োজনে সেবা-শুশ্রƒষা করা এবং মারা গেলে জানাজায় শরিক হওয়া এক প্রতিবেশীর প্রতি অপর প্রতিবেশীর অপরিহার্য দায়িত্ব। (বোখারি : ১২৪০)।
প্রতিবেশীর দ্বীন ও ঈমানের ফিকির করা ঈমানি কর্তব্য পালনের অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) এক সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বললেন, ‘আল্লাহর কসম! হয়তো তারা প্রতিবেশীকে দ্বীন শেখাবে, দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করবে, দ্বীনের বিষয়াদি হাতে-কলমে বোঝাবে, সত্য কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর যারা জানে না, ওরা তাদের থেকে দ্বীন শিখবে। দ্বীনের সঠিক বুঝ গ্রহণ করবে। দ্বীনের বিষয়াদি ভালোভাবে বুঝে নেবে এবং সচেতনতা অর্জন করবে। নতুবা আমি তাদের শাস্তি দেব।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৭৪৮)।
লেখক : আলেম ও মাদ্রাসা শিক্ষক