অনলাইন সংস্করণ
০৯:২৪, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
মুমিনের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো ঈমান। ঈমান আনার পর তা ভেঙে যাওয়া মানে ঈমান নষ্ট হয়ে যাওয়া। ঈমান ভেঙে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। ঈমান ভেঙে গেলে তওবা করে আবার ইসলাম গ্রহণ আবশ্যক।
ঈমান নষ্ট হওয়ার কারণগুলো হলো-
১. আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা : আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়- সেটা উপাস্য হিসেবে হোক কিংবা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো উপাস্য স্থির করো না।’ (সুরা ইসরাইল : ২২)। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহকে (সা.) আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোন অপরাধটি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন, ‘তুমি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত করবে অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (বোখারি : ৩৩৬০)।
২. আল্লাহ ও বান্দার মাঝে মাধ্যম বানানো : আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা তিনি। তাঁকে ডাকা ও তাঁর কাছে প্রার্থনার ক্ষেত্রে কোনো মাধ্যম গ্রহণ করা যাবে না। যদি কেউ আল্লাহকে ডাকা বা তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার ক্ষেত্রে কোনো মাধ্যম গ্রহণ এবং সে মাধ্যমকে শাফায়াতের যোগ্য মনে করে, তাহলে তার ঈমার নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বলুন! সমস্ত সুপারিশ একমাত্র আল্লাহর আওতাধীন। আসমান ও জমিনে তাঁরই সমাজ্য।’ (সুরা জুমার : ৪৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করে না, তিনি তার ওপর রাগান্বিত হন।’ (তিরমিজি : ৩৩৭৩)।
৩. কাফের-মুশরিককে কাফের-মুশরিক মনে না করা : কাফের-মুশরিককে কাফের-মুশরিক মনে করা ঈমানের অংশ। তাদের কাফের-মুশরিক মনে না করলে এবং তাদের মতবাদ সঠিক মনে করলে ঈমান ভেঙে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আহলে কিতাবিদের মাঝে যারা কুফরি ও শিরক করে; তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামি এবং তারাই সৃষ্টির মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি।’ (সুরা বাইয়িনা : ৬)। আবু মালিক (রা.)-এর পিতা বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, ‘যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলল এবং আল্লাহর ছাড়া বাকি সব উপাস্যকে অস্বীকার করল, তার সম্পদ ও রক্ত অন্য মুসলিমের জন্য নিষিদ্ধ। আর তার প্রকৃত হিসাব-নিকাশ আল্লাহর দায়িত্বে।’ (মুসলিম : ২৩)।
৪. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনবিধান বা আদর্শের চেয়ে অন্য কোনো জীবনবিধান বা আদর্শকে উত্তম মনে করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) আনীত জীবনবিধান বা আদর্শ ছাড়া অন্য কোনো জীবনবিধান বা আদর্শকে উত্তম মনে করলে ঈমান ভেঙে যায়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো কাজের আদেশ করলে, কোনো ঈমানদার নারী-পুরুষের জন্য সে বিষয়ে ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার নেই। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ অমান্য করে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।’ (সুরা আহজাব : ৩৬)।
৫. শরিয়তের কোনো অংশকে অপছন্দ করা বা অস্বীকার করা : মুমিন-মুসলমানের পক্ষে ইসলামি জীবনবিধানের কোনো অংশকে অপছন্দ বা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এ রকম করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যারা কাফের তাদের জন্য রয়েছে দুর্গতি এবং তিনি (আল্লাহ) তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দেবেন। এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তারা তা অপছন্দ করে। সুতরাং আল্লাহ তাদের নিষ্ফল করে দেবেন।’ (সুরা মুহাম্মাদ : ৮-৯)।
৬. ইসলামি বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা : ইসলামি শরিয়তের বিধিবিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হারাম। যদি কেউ শরিয়তের সওয়াব এবং কোনো শাস্তির বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে, তাহলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। কোরআনে এসেছে, ‘আপনি বলুন! তোমরা কি আল্লাহর সঙ্গে তাঁর হুকুমণ্ডআহকামের সঙ্গে এবং তাঁর রাসুলের সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছিলে? ছলনা করো না। ঈমান আনার পর তোমরা কাফের হয়ে গেছ।’ (সুরা তওবা : ৬৫-৬৬)। এক ব্যক্তির ঠাট্টা-মশকরার প্রতিউত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তাদের বলো! তোমাদের হাসি-তামাশা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত এবং তাঁর রাসুলের সঙ্গে ছিল? এখন আর ওজর পেশ করো না। তোমরা ঈমান আনার পর কুফুরি করেছ।’ (তাফসিরে তারাবি, খণ্ড : ১০, পৃষ্ঠা : ১৭২)।
৭. জাদুর মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করা : মানুষের ক্ষতি সাধন করে জাদু করা ইসলামে হারাম। এতে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কিন্তু শয়তানরাই কুফুরি করেছিল এবং তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত। তারা ভালোভাবেই জানে, যে জাদু অবলম্বন করে; পরকালে তার কোনো অংশ নেই।’ (সুরা বাকারা : ১০২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ধ্বংসাত্মক সাতটি কাজ বা বস্তু থেকে বেঁচে থাকো।’ সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করল, সেগুলো কী? রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, জাদু করাৃ।’ (বোখারি : ২৭৬৬)।
৮. মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফের বা মুশরিকদের সহযোগিতা করা : মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফের-মুশরিকদের সাহায্য-সহযোগিতা করা ঈমান ভঙ্গের কারণ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা তাদের (বিধর্মী) সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, তারা তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদের পথপ্রদর্শন করেন না।’ (সুরা মায়েদা : ৫১)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বিবেচিত হবে।’ (আবু দাউদ : ৪০৩১)।
৯. ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবনবিধান গ্রহণ : ইসলাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। আল্লাহর মনোনিত ধর্ম। রাসুল (সা.)-এর আনীত জীবনবিধান ছাড়া অন্য কোনও জীবনবিধান গ্রহণ করা বা সেটাকে উত্তম ভাবলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করবে, তার কোনো আমল গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ৮৫)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! এই উম্মতের কোনও ব্যক্তি- হোক সে ইহুদি বা নাসারা; যদি সে আমার আগমনের কথা শোনার পরও আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি তার ওপর ঈমান না এনে মারা যায়, তাহলে সে জাহান্নামিদের দলভুক্ত হবে।’ (মুসলিম : ১৫৩)।
১০. ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া : যদি কেউ আল্লাহর মনোনীত দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যখন কোনো ব্যক্তিকে আল্লাহর আয়াতগুলো দ্বারা উপদেশ প্রদান করা হয়। অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তার চেয়ে জালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) অপরাধীদের শাস্তি দেব।’ (সুরা সিজদাহ : ২২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ইসলামের পরিবর্তে অন্য কোানো ধর্মের ওপর শপথ করবে, সে ওই ধর্মের অনুসারী বলে গণ্য হবে।’ (বোখারি : ১৩৬৪)।