ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিলুপ্তির পথে গাজী শাহ পীরপাল মসজিদ

বিলুপ্তির পথে গাজী শাহ পীরপাল মসজিদ

রংপুর জেলার চণ্ডিপুর গ্রাম। সুনিবিড় ছায়াঘেরা গ্রামটির চারদিকে সবুজের হাতছানি। নানা রকম তরুমহীরুহে ঘেরা চারপাশ। সেখান বসা হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে প্রতিটি আলো-আঁধারির সন্ধ্যা। দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ফসলি জমি। সবুজাভ এই গ্রামে কোনো এককালে নির্মিত হয়েছে পীরপাল শাহী মসজিদ।

বর্তমান অব্যবহৃত মসজিদটি অবহেলা আর অনাদৃত অবস্থায় পড়ে আছে গ্রামের এক কোণে। দেয়ালের আস্তরণ খসে পড়েছে অনেক আগেই। দেয়াল ফুঁড়ে গজিয়ে উঠেছে জংলি গাছ আর লতাগুল্ম। সুনশান নীরবতা চারপাশে। দেখলেই ভয়ে গা ছমছম করে ওঠে। ওপরের বিশালাকৃতির তিন গম্বুজে ফাটল ধরেছে। কিছুদিন পর হয়তো ধসে পড়বে। চারপাশের চারটি মিনার ধসে পড়েছে এর মধ্যে। রংপুর-দিনাজপুরের মধ্যে এর চেয়ে পুরোনো স্থাপনা আর নেই। যুগ যুগ ধরে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে।

মসজিদের দেয়ালে কোনো ফলক বা নামলিপি না থাকায় মসজিদটি ঠিক কত সনে নির্মিত হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে নির্মাণশৈলি দৃষ্টে প্রতীয়মান হয় এটি নির্মিত হয়েছে সুলতানি আমলে। মসজিদের দেয়ালের যে অংশের আস্তরণ এখনও খসে পড়েনি, সেখানে রয়েছে অপূর্ব কারুকার্যের ছাপ। এর থেকে ধারণা করা হয়, মসজিদটির নির্মাতা ছিলেন বেশ সুরুচিবান।

তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির দৈর্ঘ ৩২ ফুট এবং প্রস্থ ১৬ফুট। দেয়ালের পুরুত্ব ৪ ফুট প্রায়। ভূমি থেকে কার্নিস পর্যন্ত উচ্চতা ১৪ ফুট। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এর চেয়ে ছোট মসজিদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়নি। তাই অনেকের মতে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মসজিদ। মসজিদের ভেতর প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি দরোজা। পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে সুন্দর কারুকার্যের তিনটি মেহরাব। মেহরাব তিনটির মধ্যে মাঝখানেরটি অন্য দুটো থেকে খানিকটা বড় এবং সুন্দর। মেহরাবের বামপাশে রয়েছে ইটনির্মিত তিন সিঁড়ির একটি ছোট্ট মিম্বর। উত্তর ও দক্ষিণে আরও দুটো সরু দরজা রয়েছো। আনুমানিক এগুলো একসময় জানালা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মসজিদের ফ্লোরটি শ্যাওলা জমে পিচ্ছিল হয়ে আছে। মসজিদের ভেতর নামাজের জন্য তিন কাতার পরিমাণ জায়গা আছে। প্রতি কাতারে ১৮ থেকে ২০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে সক্ষম। দিন দিন মসজিদটি ধ্বংসের দিগে এগিয়ে যাচ্ছে।

রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্বে রংপুর-পীরগাছা আঞ্চলিক মহাসড়কের চণ্ডিপুর দীঘির পশ্চিম পাশ ঘেঁষে মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদের উত্তর পাশে একটি ধ্বংসপ্রায় ইমামবাড়া রয়েছে। শিয়া সম্প্রদায় হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর স্মরণে এমন ছোট ঘর নির্মাণ করে থাকে। এসব ঘরে মিলাদণ্ডকিয়াম ইত্যাদি আয়োজন করা হয়। এই ইমামবাড়া দৃষ্টে প্রতীয়মান হয়, এ অঞ্চলে একসময় শিয়া সম্প্রদায়ের আধিক্য ছিল। কালের বিবর্তনে এলাকাটি শিয়া শূন্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদটিও অনাবাদি হয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি অন্যান্য মুসলিম অনুষ্ঠানাদিও বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রতি বছর বৈশাখ মাসে মেলা বসে। ধারণা করা হয়, এই মেলা ঐসব রীতিরই কোনো এক অংশ। প্রায় চারশো বছরের প্রাচীন এ মসজিদে কত যুগ বা শতাব্দী থেকে নামাজ আদায় হয় না, তা জানা দুষ্কর। একবার এলাকাবাসী মসজিদটি সংস্কারের মাধ্যমে নামাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু মসজিদের তৎকালীন জিম্মাদার মৃত গমির শেখের ছেলে বেলাল শেখ গং দাবি করে স্থাপনাটি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে অবস্থিত। সে নামাজ পড়তে বাধা দেয়। ফলে এটি আবারও অনাবাদিই রয়ে যায়।

আবা/এসআর/২৫

বিলুপ্তি,পীরপাল মসজিদ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত