ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

যেসব স্থলজ প্রাণী খাওয়া হারাম

রায়হান রাশেদ
যেসব স্থলজ প্রাণী খাওয়া হারাম

মানুষের জন্য কী খাওয়া বৈধ আর কী খাওয়া অবৈধ- প্রাচীনকাল থেকেই নানা মতামত চলে আসছে। তবে ইসলাম এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। হালাল খাবার গ্রহণ এবং হারাম বর্জনের আদেশ দিয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি বলে দিন, যা কিছু বিধান অহির (প্রত্যাদেশ) মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, আহারকারী যা আহার করে তাতে তার জন্য আমি কোনো হারাম খাবার পাই না; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের মাংস- এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ।’ (সুরা আনআম : ১৪৫)।

প্রাক ইসলামি যুগে আরবরা অনেক কিছু খেত, অনেক কিছু ঘৃণাবশত বর্জন করত। রাসুলুল্লাহ (সা.) এসে আল্লাহতায়ালার আদেশে হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম করলেন। তাই আল্লাহতায়ালা যা হালাল করেছেন তা হালাল আর যা হারাম করেছেন তা হারাম। যে সম্পর্কে নীরব থেকেছেন, তা ছাড়যোগ্য। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি (রাসুলুল্লাহ সা.) তাদের জন্য পবিত্র বস্তুগুলো হালাল করেন এবং অপবিত্র ও নোংরা বস্তুগুলো হারাম করেন।’ (সুরা আরাফ : ১৫৭)। সাধারণত প্রাণী দুই ধরনের- স্থলজ প্রাণী ও জলজ প্রাণী। জলজ প্রাণীর মধ্যে মাছ ছাড়া সব প্রাণী খাওয়া হারাম।

স্থলজ প্রাণী আবার তিন প্রকার। যথা-

১. ওই সব প্রাণী, যার কোনো রক্ত নেই, যেমন : মশা-মাছি, মাকড়সা, পিঁপড়া, টিড্ডি ইত্যাদি। ২. প্রবাহিত রক্তবিশিষ্ট প্রাণী নয়। যেমন- সাপ, ইঁদুর ইত্যাদি। উভয় প্রকার প্রাণীর মধ্যে টিড্ডি ছাড়া বাকি সব ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট হওয়ায় সেগুলো খাওয়া হারাম। ৩. ওই সব প্রাণী, যা প্রবাহিত রক্তবিশিষ্ট হয়, যেমন- পাখি ও অন্যান্য চতুষ্পদ জন্তু। সেগুলো আবার দুই প্রকার : প্রথমত, পাখি। পাখির মধ্যে যেসব পাখি থাবা ও নখরবিশিষ্ট হয়। যেমন- চিল, শকুন, বাজ, ঈগল ইত্যাদি খাওয়া মাকরুহে তাহরিমি মানে খাওয়া নিষেধ। আবু সালাবা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক শিকারি দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র প্রাণী ও প্রত্যেক শিকারি নখবিশিষ্ট পাখি খেতে নিষেধ করেছেন।’ (বোখারি : ৫৫৩০)।

প্রথমত, যেসব পাখি ঠোঁটের সাহায্যে খায়, সেগুলো খাওয়া হালাল। এর মধ্য থেকে যেগুলো নাপাকি খায়, সেগুলো মাকরুহ। তবে বেশিরভাগ খাবার যদি হালাল খায়, তবে হালাল। দ্বিতীয়ত, পশু। হিংস্র পশু, যা থাবা মেরে ও আক্রমণ করে খায়, সেসব পশু খাওয়া হারাম। যেমন- সিংহ, বাঘ, কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, হাতি ও বানর ইত্যাদি। অহিংস্র পশুর মধ্যে যেগুলোর পুরো শরীর পাক, সেগুলো খাওয়া হালাল। যেমন- গৃহপালিত গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট, দুম্বা। তেমনি বন্যপশুর মধ্যে বন্য গরু, হরিণ, খরগোশ, বন্য গাধা। আর যেগুলোর পূর্ণ দেহ নাপাক, সেগুলো হারাম। যেমন- শূকর। সব ধরনের ঘোড়া ও গৃহপালিত গাধা খাওয়া মাকরুহ। হালাল প্রাণীর মধ্যে যেসব প্রাণী সব সময় নাপাক খায়, সেগুলো খাওয়াও মাকরুহ। জাবের (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) খায়বরের দিন গৃহপালিত গাধা খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খেতে অনুমতি দিয়েছেন।’ (বোখারি : ৪২১৬)।

আল্লাহতায়ালার নাম নেওয়া ছাড়া জবাইকৃত হালাল পশুপাখিও হারাম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা তা থেকে আহার করো না যার ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি এবং নিশ্চয় তা সীমা লঙ্ঘন।’ (সুরা আনআম : ১২১)। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে উল্লিখিত প্রাণীগুলো খাওয়া নিষিদ্ধ থাকবে। তবে চরম পর্যায়ে খাবারের অভাব মেটাতে এবং জীবন বাঁচাতে চিকিৎসার প্রয়োজনে এগুলো খাওয়া ও ব্যবহার করা যাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ?‘আর আল্লাহ যেসব জন্তুর বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, সেগুলোকে তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। তবে যদি তোমরা নিরুপায় হয়ে যাও, তা হলে ভিন্ন কথা (অর্থাৎ সেক্ষেত্রে নিষিদ্ধ বস্তু ততটুকু খেতে পারো, যতটুকু খেলে প্রাণ বাঁচানো যায়।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১১৯; বোখারি : ৫৮৩৯)।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

স্থলজ প্রাণী,খাওয়া,বৈধ,অবৈধ,হালাল,হারাম,ইসলাম
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত