ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শিশুদের প্রতি নবীজি (সা.) এর ভালোবাসা

শিশুদের প্রতি নবীজি (সা.) এর ভালোবাসা

শিশুদের চরিত্র গঠন ও জীবন গড়ার ক্ষেত্রে মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনই সর্বশ্রেষ্ঠ উপমা। তাঁর জীবনজুড়ে ছিল শিশুদের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা। শিশুরাও তাঁর সান্নিধ্যে এসে নুরে উদ্ভাসিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব : ২১)।

শিশুদের প্রতি নবীজির স্নেহ : শিশুরা আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত ও বরকত। নবীজি (সা.) শিশুদের প্রজাপতি ও ফুলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘শিশুরা জান্নাতের প্রজাপতি।’ (তিরমিজি : ১৯১০)। প্রজাপতির মতো শিশুরাও তাদের নিষ্কলুষ মন ও সৌন্দর্য দিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করে। তিনি আরও বলেন, ‘শিশুরা আল্লাহর ফুল।’ (তিরমিজি : ১৯১২)।

শিশুদের আদর করা : নবীজি (সা.) শিশুদের প্রতি অসীম মমত্ববোধ পোষণ করতেন। তিনি বলেন, ‘যে ছোটদের আদর করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে আমাদের নয়।’ (মুসলিম : ২৩১৮)। নবীজি কখনও শিশুদের কঠোর কথা বলতেন না বা চোখ রাঙাতেন না। শিশুদের দেখলে তিনি আনন্দে-উদ্বেল হতেন, কোলে তুলে নিতেন এবং মজার মজার কথা বলে তাদের আনন্দ দিতেন। তাঁর এই আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয়। নবীজি কখনও শিশুদের ওপর রাগ করতেন না, কঠোর কথা বলতেন না বা চোখ রাঙাতেন না। শিশুদের দেখলে তিনি আনন্দে-উদ্বেল হতেন, তাদের বুকে জড়িয়ে ধরতেন, কোলে তুলে নিতেন এবং মজার মজার কথা বলে তাদের আনন্দ দিতেন। তাঁর এই আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয়।

শিশুদের চুমু খাওয়া : একদিন নবীজি (সা.) তাঁর নাতি হাসান (রা.)-কে আদর করে চুমু খাচ্ছিলেন। এ দৃশ্য দেখে আকরা ইবনে হারিস বললেন, ‘আমার ১০টি সন্তান আছে; কিন্তু আমি কখনো তাদের এভাবে আদর করি না।’ নবীজি বললেন, ‘যদি আল্লাহ তোমার অন্তর থেকে মমতা তুলে নিয়ে থাকেন, তবে আমি কী করতে পারি?’ (বোখারি : ৫৯৯৭)। নবীজি আরও বলেন, ‘যে শিশুদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে না, সে আমার উম্মত নয়।’ (বোখারি : ৬০০২)।

সব শিশুর প্রতি সমান ভালোবাসা : নবীজি (সা.) জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব শিশুর প্রতি সমান ভালোবাসা প্রদর্শন করতেন। মুসলিম শিশুদের যেমন আদর করতেন, তেমনি অমুসলিম শিশুদেরও সমান স্নেহ করতেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক শিশু ফিতরাতের (ইসলামের স্বভাবের) ওপর জন্মগ্রহণ করে। তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদি, খ্রিষ্টান বা অগ্নিপূজক বানায়।’ (বোখারি : ১৩৫৮)।

একবার এক বেদুইন নবীজিকে শিশুদের সঙ্গে আনন্দ করতে দেখে বললেন, ‘শিশুদের সঙ্গে এমন আনন্দ করা আমার পছন্দ নয়।’ নবীজি দুঃখ পেয়ে বললেন: ‘যার হৃদয়ে মায়া নেই, আল্লাহ তার প্রতি দয়া দিন।’ (মুসলিম : ২৩১৬)।

এতিম শিশুদের প্রতি বিশেষ মমতা : নবীজি (সা.) এতিম শিশুদের প্রতি বিশেষ মমতা দেখাতেন। তিনি বলেন, ‘আমি ও এতিমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনভাবে থাকব।’ (বোখারি : ৫৩০৪)। তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙুলের মধ্যে সামান্য ফাঁক রেখে এ কথা বলেন, যা এতিমের প্রতি তাঁর নৈকট্যের ইঙ্গিত দেয়। ইসলামে এতিমের সম্পদ ভক্ষণকে কবিরা গোনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা ও আনন্দ : নবীজি (সা.) শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, ‘দেখো, কে আমার কাছে আগে পৌঁছাতে পারে!’ শিশুরা তাঁর কোলে, কাঁধে বা গলায় ঝুলে পড়ত। তিনি অপরিচিত শিশুদেরও সমান আদর করতেন। একবার হজরত আনাস (রা.)-এর ছোট ভাইয়ের পোষা পাখি মারা যায়। নবীজি তাকে আদর করে বললেন, ‘হে আবু উমায়র, তোমার পাখির ছানাটির কী হলো?’ (বোখারি : ৬১২৯)। শিশুটি তাঁর কথায় হেসে ফেলে। এ ঘটনা নবীজির শিশুদের মন বোঝার অসাধারণ ক্ষমতার প্রমাণ।

শিশুদের প্রতি সহানুভূতি : একবার উম্মে কায়েস বিনতে মুহসিন (রা.) তাঁর শিশুপুত্রকে নিয়ে নবীজির কাছে আসেন। শিশু তাঁর কোলে প্রস্রাব করে ফেলে। নবীজি বিন্দুমাত্র বিরক্ত না হয়ে মুচকি হেসে পানি দিয়ে কাপড় পরিষ্কার করেন। (বোখারি : ২২৩)। অন্য এক ঘটনায়, এক শিশু মায়ের দেওয়া আঙুর নিজে খেয়ে ফেলে। নবীজি তাকে আদর করে বললেন, ‘কী হে, মায়ের দেওয়া আঙুরগুলো কোথায় হারিয়ে গেল?’ (আবু দাউদ : ৪৯৯১)।

শিশুদের শিক্ষা ও মর্যাদা : নবীজি (সা.) শিশুদের শিক্ষা ও মর্যাদার প্রতি গুরুত্ব দিতেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা শিশুদের স্নেহ করো এবং তাদের প্রতি দয়ালু হও।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ৬১৫০)। নবীজি (সা.) শিশুদের সঠিক নামে ডাকতেন এবং তাদের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত করতেন। তিনি বলেন, ‘সন্তানকে সদাচার শিক্ষা দেওয়া দান-খয়রাতের চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম : ১৬২৮)।

শিশুদের প্রতি নবীজির স্নেহের প্রভাব : নবীজির আগমনে শিশুরা আনন্দে উদ্বেল হতো। আবু নাঈম বর্ণনা করেন, ‘নবীজির কাফেলা দেখে আমরা খেলাধুলা ভুলে তাঁর দিকে ছুটে যেতাম। তিনি ক্লান্ত হওয়া সত্ত্বেও আমাদের জন্য থামতেন, আমাদের আদর করতেন।

আমি লাজুক ছিলাম, কিন্তু তিনি হাসিমুখে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেন। তাঁর স্নেহ আমার জীবনে অবিস্মরণীয়।’ (ইমাম আহমদ, মুসনাদ, ৫/২৭৮)। শিশুদের প্রতি নবীজির (সা.) স্নেহ, মমতা ও আদর্শ শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য অনুকরণীয়। তিনি শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে গুরুত্ব দিয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি শিশু হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের গোপনে ধ্বংস করবে না।’ (আবু দাউদ : ২৮৭৮)।

শিশু,নবীজি,ভালোবাসা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত