ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইসলামে মানব পাচার হারাম

যুবায়ের আহমাদ
ইসলামে মানব পাচার হারাম

মানব পাচারকে দাসত্বের আধুনিক রূপ বলা হয়। একটি জরিপে এসেছে, গত আট বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছে সাড়ে ২০ লাখ পাচার হওয়া মানুষ। এ সময় নৌযান ডুবে মারা গেছে ১৯ হাজারের বেশি মানুষ। (দৈনিক ইত্তেফাক : ১ এপ্রিল, ২০২২)। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া এবং সাগরে ডুবে যাওয়া মানুষের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যাও কম নয়।

ইউরোপীয় কমিশন বলছে, গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে শুধু ইউরোপেই পাচার হয়েছে ৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। (বিবিসি বাংলা : ৩০ জুলাই, ২০২২)।

পাচার হওয়া নারী ও মেয়েশিশুদের পতিতাবৃত্তি, গৃহস্থালির কাজ এবং নানাবিধ ঝুঁকিপূর্ণ কাজসহ অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করা হয়। আর পুরুষদের মাদক ও অস্ত্র পাচার, চোরাচালান, চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অমানবিক, অপরাধমূলক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বাধ্য করা হয়। সৃষ্টির সেরা মানুষকে এভাবে পণ্য বানিয়ে বিক্রি করা, উন্নত জীবনের মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে দাসে পরিণত করা, জীবনের ঝুঁকিতে ফেলায় লঙ্ঘন হচ্ছে মানবাধিকার। কিছু মানুষের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার স্বপ্ন, হাজার হাজার পরিবারের চিরদিনের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

প্রথমত, এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের সচেতনতা কাম্য। ‘উন্নত জীবনের’ স্বপ্ন দেখে অবৈধ পথে বিদেশ গমনের চিন্তা করা যাবে না। ইসলামে জীবনের সম্মান ও মূল্য অনেক বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এমন বিপথগামী পথে চলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : ১৯৫)। আরও এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে আত্মহত্যা করে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করব। আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ (সুরা নিসা : ২৯-৩০)।

দ্বিতীয়ত, যারা নিজেদের বিত্তশালী বানাতে সৃষ্টির সেরা মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে তাদের করুণ পরিণতি বরণ করতে হবে। দুনিয়ার বিচার, আদালতকে কৌশল কিংবা প্রভাবে ফাঁকি দিতে পারলেও পরকালে তাদের শাস্তি অবধারিত। সর্বশক্তিমান আল্লাহ নিজেই তাদের প্রতিপক্ষ হবেন হাশরের ময়দানে। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের প্রতিপক্ষ। আর আমি যার প্রতিপক্ষ তার পরাজয় অনিবার্য। তাদের এক শ্রেণি হলো, যে ব্যক্তি স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করবে।’ (বোখারি : ২২২৭)।

সম্পদ উপার্জনের নেশায় যারা অন্যকে জিম্মি করবে, আল্লাহ তাদের দুনিয়াকে অশান্তিময় করে দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার উদ্দেশ্য হবে শুধু দুনিয়া অর্জন, আল্লাহ তার কাজকে এলোমেলো বিক্ষিপ্ত করে দেবেন। পেরেশানি সৃষ্টি করে দেবেন। সম্পদের পাহাড় থাকলেও তার দুই চোখের সামনে দারিদ্র্য এনে দেবেন (‘আরও চাই আরও চাই’ প্রবণতা তাকে পাগল করে তুলবে)। অথচ পার্থিব সম্পদ সে ততটাই লাভ করতে পারবে, যতটা আল্লাহ তার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন।’ (ইবনে মাজাহ : ৪১০৫)।

তৃতীয়ত, পাচারের ধরন পাল্টালেও কমছে না মানব পাচার। এর পেছনে বড় কারণ হলো এ সংক্রান্ত মামলাগুলোর বিচারের দীর্ঘসূত্রতা। পুলিশের তথ্য বলছে, মানব পাচারের ঘটনায় ২০০৪-২০ সাল পর্যন্ত ৬ হাজার ১৩৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত হয়েছে ১১ হাজার ৪৬০ জন। এসবের মধ্যে শুধু ২৩৩টি মামলায় শুধু ৪০৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আসামিদের অনেকেই খালাস পেয়েছিল, কারণ বিচারের দীর্ঘসূত্রতা। (সময়ের আলো : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০)।

লেখক : পরিচালক বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর

ইসলাম,মানব পাচার,হারাম,জিম্মি,মানুষ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত