
সম্প্রতি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক। আমাদের এখনই ভাবতে হবে, আমরা কী আমাদের সংসারগুলো ভাঙব? নাকি দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার পথে হাঁটব! দাম্পত্য জীবনকে আরও উপভোগ করতে চেষ্টা করব। কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি নিদর্শন হচ্ছে, তিনি তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন তোমাদের থেকেই; যাতে করে তোমরা প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর তোমাদের পরস্পরের মধ্যে দিয়েছেন ভালোবাসা, দয়া ও রহমত।’ এই মানসিক প্রশান্তি ও ভালোবাসা একজন মানুষ কীভাবে পাবে? যখন সে পুরুষ বা নারী হিসেবে একাকিত্ব বোধ করবেন। একে অপর থেকে দূরত্বে অবস্থান করবেন। বোঝা গেল ইসলাম নারী তথা স্ত্রী জাতি সৃষ্টির একটি কারণ উল্লেখ করেছে, তার স্বামীর মানসিক প্রশান্তির জন্য। যার মধ্যে নিহিত রয়েছে সুখ শান্তি ভালোবাসা ইত্যাদি। অবশ্যই দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে হলে, নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি যত্নবান হতে হবে। পরিহারযোগ্য বিষয়গুলো বাদ দিতে হবে। করণীয়গুলো পালন করতে হবে। তবেই যদি সংসার হয় সুখময়।
স্ত্রী-স্বামীকে বা স্বামী-স্ত্রীকে সময় দেওয়া : দেখা যায়, একই ছাদের নিচে অবস্থান করা সত্ত্বেও দুজন একত্রিত হন না। কেউবা কথা বলেন না। ঘরেও অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার হয়। কিংবা নেট ইউজ করেই টাইম শেষ করে দিচ্ছেন। অথচ কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। সময় দিচ্ছেন না। আবার এমনও হতে পারে, সংসারের কাজ করতে গিয়েও সময় হচ্ছে না। কারও অনেক বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেমন সকালের নাশতা তৈরি করা, সন্তানকে সময় দেওয়া, ঘর গোছানো, কাপড় ধোয়া, দুপুরের রান্না ইত্যাদি। এভাবেই দিন শেষে রাত। রাতের শেষে দিন। এমন সংসারে কখনো সুখ-শান্তি আসতে পারে না। বরং পারস্পরিক বোরিং ফিল থেকে এমন সংসার ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনাই অনেক বেশি। কাজেই দূরত্ব কমিয়ে একে অপরকে সময় দিতে হবে!
সাজসজ্জায় কৃপণতা না করা : আজকাল অনেক নারীই স্বামীর অনুগত হতে, ঘরে সাজগোজ করতে অনীহা পোষণ করেন। এটা কোনোভাই কাম্য নয়। দেখা যায় ঘরে একেবারে সাদামাটা জীবনযাপন করছেন। কিন্তু বাইরে বের হতে হলে, সাজসজ্জায় কোনো কার্পণ্য করছেন না মোটেও। এভাবে সংসারে অশান্তি তৈরি হতে পারে। এ জন্য স্বামীর পছন্দের প্রতি গুরুত্বারোপ করা জরুরি। সাজগোজ ও পরিপাটি থাকা জরুরি। অবশ্য আমাদের কর্মব্যস্ত সংসারী জীবনে নারীরা বাড়তি সাজসজ্জার সময়ই পান না। আবার ঘরের পরিবেশও অনুকূল হয় না, সব সময় সবার জন্য। তাই এ বিষয়ের প্রতি যত্নবান হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
দায়িত্ব পালন, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ লালন করা : বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি দায়িত্ব ও করণীয় কী? এটাই অনেকে বোঝেন না। একজন আদর্শ স্ত্রীর দায়িত্ব স্বামীর অনুগত হওয়া। সর্বোচ্চ স্বামীর সেবাযত্নের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করা ইত্যাদি। অতীতে এ বিষয়গুলো আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত এবং চর্চা হলেও, বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। বরং স্বামীর সেবাযত্নকে এখন দাসত্বের লেভেল লাগিয়ে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা চলছে। অথচ এই নারীই বিমানবালা হয়ে পরপুরুষের জন্য শ্রম দিচ্ছেন। চাকরিসূত্রে সব নির্দেশই মেনে চলছেন। অথচ স্বামীর প্রতি অনুগত হচ্ছেন না। স্বামীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করছেন না। আর একজন আদর্শ স্বামীর দায়িত্ব হলো, স্ত্রীর ভরণপোষণসহ যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করতে সর্বোচ্চ সচেষ্ট হওয়া। সাধ্যের মধ্যে স্ত্রীর দাবিগুলো পূর্ণ করা। বৈধ ও সাধ্যের আবদার পূরণে গুরুত্ব দেওয়া। এভাবেই পরস্পরের মধ্যে দায়িত্ব, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হবে। বাড়বে পারস্পরিক দায়িত্ববোধ, সম্মান ও শ্রদ্ধা।
শুধু অর্থসম্পদ দেখে বিয়ে না করা : আজকাল শুধু অর্থ সম্পদ ও প্রাচুর্য দেখেই অনেক নারীকে বিয়ে করা হয়। কিন্তু এর পর দেখা যায় যে, অর্থবিত্তের অধিকারী ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে সংসারজীবন সম্পর্কে অনীহা পোষণ বা উচ্চাকাঙ্ক্ষা লালন করেন। বিভিন্ন শর্ত যোগ করেন। আর এভাবে একজন অল্প অর্থসম্পদের অধিকারী কখনও এমন নারীকে বিয়ে করে সুখী হতে পারে না! কাজেই সংসারে অশান্তি ও ভাঙন হওয়াই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। অথচ হাদিসে নারীদের চারটি গুণ দেখে বিয়ের কথা বলা হয়েছে। তবে ধার্মিকতাকেই আগে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-নবীজি (সা.) বলেন, নারীদের চার কারণে বিবাহ করা হয়। তার মাল সম্পদ। তার বংশ গৌরব। তার সৌন্দর্য এবং তার ধার্মিকতা দেখে। তুমি ধার্মিক নারীকে বিবাহ করে ধন্য হও। ‘তোমার দু’হাত মাটিমাখা হোক।’ (অর্থাৎ বোকামি করো না, বুদ্ধির পরিচয় দাও।) (নাসায়ি)
স্বামীর অবাধ্য না হওয়া : স্বামীর অনুগত হওয়া একজন নারীর জন্য এতটাই আবশ্যক যে, হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি যদি কাউকে সেজদা দিতে আদেশ করতাম, তবে স্ত্রীকে বলতাম, সে যেন তার স্বামীকে সেজদা করে। (তিরমিজি)। একইভাবে সুনানে তিরমিজির অপর এক বর্ণনায় এসেছে- রাসুল (সা.) বলেন, কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীকে ডাকে, আর স্ত্রী চুলায় রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকে, তবুও সে যেন তার স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়।
অন্য কোনো নারী বা পুরুষে আসক্ত না হওয়া : মানুষের ব্যস্ততা ও কর্মতৎপরতা এতই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে সময় দিতে অক্ষম হচ্ছেন। দুজন দু-প্রান্তে বসবাস করতে হচ্ছে। যথাসময়ে দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছে না। কথা হচ্ছে না। কিংবা কর্মজীবী হিসেবে একত্র হওয়ার সুযোগ কম। আবার কর্মস্থলে পর নারী বা পুরুষের সঙ্গে উঠবস করা ও অবাধ মেলামেশার অভ্যাস গড়ে তোলা। ফলে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে অবৈধ সম্পর্ককে উপভোগ করা। আর এভাবেই বৈধ দাম্পত্য জীবন বিষাদময় হয়ে ওঠে। সুখের সংসারে নেমে আসে অশান্তির দাবানল। এ জন্য স্বামী-স্ত্রী একত্রে থাকার ব্যবস্থা করা জরুরি। যাতে একে অপরের সঙ্গে সারাক্ষণ যোগাযোগ বা দিনের বেশি সময় পার করা যায়।