
আল্লাহতায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য, আর ইবাদতের সবচেয়ে বড় নিদর্শন হলো নামাজ। যে ব্যক্তি নামাজ পরিত্যাগ করে, সে আসলে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ।’ (মুসলিম : ৮২)। অর্থাৎ নামাজ ছেড়ে দেওয়া মানে ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া।
কোরআনে নামাজ না পড়ার শাস্তি : আল্লাহতায়ালা অনেক আয়াতে নামাজ প্রতিষ্ঠার আদেশ দিয়েছেন এবং নামাজ ত্যাগকারীদের সম্পর্কে কঠোর সতর্কতা দিয়েছেন।
১. সুরা মরিয়ম : ‘তাদের পর এমন এক প্রজন্ম এলো, যারা নামাজ নষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। তারা শিগগিরই গোমরাহির শাস্তির সম্মুখীন হবে।’ (আয়াত : ৫৯)।
২. সুরা মুদ্দাসসির : ‘তোমাদের কী জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে?’ তারা বলবে, ‘আমরা নামাজ আদায় করতাম না।’ (আয়াত : ৪২-৪৩)। এই আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, নামাজ না পড়া জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
৩. সুরা তহা : ‘আমার স্মরণের জন্য নামাজ কায়েম করো।’ (আয়াত : ১৪)। অর্থাৎ, নামাজ না পড়া মানে আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।
হাদিসে নামাজ না পড়ার শাস্তি
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ ছেড়ে দিলে মানুষ কুফরির কাছাকাছি চলে যায়।’ (মুসলিম : ৮২)। ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করে, তার ওপর আল্লাহর কোনো দায়িত্ব নেই।’ (ইবনে মাজাহ : ৪০২৩)। অর্থাৎ সে আল্লাহর রহমত ও রক্ষার বাইরে চলে যায়।
আরেক হাদিসে এসেছে, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ প্রথমে নামাজের হিসাব নেবেন। যদি নামাজ ঠিক থাকে, তবে বাকি কাজও ঠিক থাকবে; আর যদি নামাজ নষ্ট হয়, তবে সব কাজই নষ্ট হবে।’ (তিরমিজি : ৪১৩)।
দুনিয়ায় নামাজ না পড়ার পরিণতি
১. হৃদয়ের কঠোরতা : আল্লাহর ভয় ও রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।
২. অশান্তি ও হতাশা : নামাজ আল্লাহর স্মরণ; তা না থাকলে মন অশান্ত থাকে।
৩. রিজিকে অবারকতা : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ রিজিক বৃদ্ধি করে।’ নামাজ না পড়লে তার উল্টো ঘটে।
৪. অন্ধকার ও হতাশ মৃত্যু : হাদিসে এসেছে, ‘নামাজ হলো কবর ও আখিরাতে আলো।’ (মুসলিম : ২২৩)।
পরকালে নামাজ না পড়ার শাস্তি
১. জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়া। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা নামাজ আদায় করে না, তাদের জন্য আফসোস! (ওয়াইল)’ (সুরা মাউন : ৪৫)।
২. হিসাবের দিন প্রথম প্রশ্নেই ব্যর্থতা : নামাজ ঠিক না থাকলে সব আমল বাতিল হবে।
৩. চিরন্তন আফসোস : কেয়ামতের দিন তারা বলবে: ‘হায়, যদি আমি নামাজ আদায় করতাম, তাহলে আজ এই অবস্থা হতো না!’ ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল (রহ.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করে, সে কাফের।’ (আল-মুগনি, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৪৪৩)।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, ‘যে নামাজ ছেড়ে দেয়, তাকে তওবা করতে বলা হবে; তাওবা না করলে শাস্তি দেওয়া হবে, তবে কাফের গণ্য হবে না।’ (ফাতহুল কাদির, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২৯৪)।
ইমাম শাফেয়ি ও মালেকি মত অনুযায়ী, ‘নামাজ না পড়া বড় গুনাহ, তবে ঈমান অস্বীকার না করলে সে ইসলাম থেকে বের হয় না।’ (আল-মাজমু, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ১২)।
নামাজ ত্যাগকারীর জন্য উপদেশ : আল্লাহর দরজা সর্বদা খোলা। যে ব্যক্তি তওবা করে আবার নামাজে ফিরে আসে, আল্লাহ তার অতীতের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি বলো, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোহ ক্ষমা করেন।’ (সুরা জুমার : ৫৩)।
নামাজ শুধু একটি ফরজ ইবাদত নয়, মুসলমানের জীবনের মেরুদণ্ড। যে নামাজ পড়ে, সে আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকে; আর যে নামাজ ত্যাগ করে, সে নিজের জীবনের আলো নিভিয়ে দেয়। তাই আসুন, আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা করি, আজ থেকেই নিয়মিত নামাজ পড়ব, কারণ নামাজই আমাদের কবরের আলো, দুনিয়ার শান্তি।