
আজ ২৮ জুলাই, পালিত হচ্ছে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি নানা কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— “আসুন এটি ভেঙে ফেলা যাক” (Let’s Break It Down)।
এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানানো হয়েছে— হেপাটাইটিস সম্পর্কে বিদ্যমান নীরবতা, অজ্ঞতা, ভয় ও কুসংস্কার দূর করে সময়মতো পরীক্ষা, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিশ্চিত করার জন্য।
দিবসটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও আজ ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’ উদযাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘আসুন এটি ভেঙে ফেলা যাক’।
তিনি আরও বলেন, লিভার রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা, সময়মত চিকিৎসা না করা এবং নানা কুসংস্কারের কারণে দেশে লিভার রোগের প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিস একটি নীরব ঘাতক রোগ হিসেবে পরিচিত। প্রতিবারের মতো এবারও দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য— হেপাটাইটিস সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি, প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আক্রান্তদের চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানো।
ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই, বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স এই দিবস পালনের সূচনা করে। পরবর্তীতে ২০১০ সালে, ৬৩তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে গৃহীত একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দিবসটিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। ২৮ জুলাই দিনটি নির্ধারণ করা হয় হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের আবিষ্কারক ও নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ড. বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গ-এর জন্মদিনকে স্মরণ করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে হেপাটাইটিস একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার ও লিভার ফেইলিওর-এর মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হন এবং অনেকেই প্রাণ হারান।
চিকিৎসকরা বলছেন, সময়মতো শনাক্তকরণ, টিকা গ্রহণ ও চিকিৎসার মাধ্যমে এসব রোগ শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৬০ লাখ এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ১০ লাখ মানুষ রয়েছেন, যাদের অনেকেই জানেন না তারা আক্রান্ত। এ কারণে সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
সচেতনতা ও কর্মসূচি বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে আজ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে স্ক্রিনিং ক্যাম্প, সচেতনতামূলক সেমিনার, টক শো, টিকাদান অভিযান ও পোস্টার ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের উদ্যোগে দিনব্যাপী তথ্য প্রচার ও লিভার রোগ বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ লিভার ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও দিবসটি উপলক্ষে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
করণীয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিস নির্মূলে চাই—
বৈশ্বিক উদ্যোগ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে ভাইরাল হেপাটাইটিস নির্মূল করা। এ লক্ষ্যে ১০০টিরও বেশি দেশে প্রতিবছর এই দিনে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। WHO ও World Hepatitis Alliance প্রতি বছর দিবসটির আয়োজন ও প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
হেপাটাইটিস একটি নিরাময়যোগ্য রোগ। সময়মতো টিকা ও চিকিৎসা গ্রহণই এই প্রাণঘাতী রোগ থেকে বাঁচার প্রধান উপায়। তাই, আজকের এই দিনে আমরা প্রতিজ্ঞা করি— “নীরবতা ভাঙবো, সচেতনতা গড়বো”, যেন আর একটি জীবনও হেপাটাইটিসে না হারায়।