
রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় একটি নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় তুলে ধরা হয়েছে।
ঘোষণাপত্রে ২০২৪ সালের গণজাগরণকে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী চূড়ান্ত গণঅভ্যুত্থান’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
এই ঘোষণাপত্রে একদিকে যেমন বাংলাদেশের ইতিহাস, স্বাধীনতা সংগ্রাম, সামরিক ও রাজনৈতিক শাসনের পর্যায়গুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে; অন্যদিকে তেমনি তুলে ধরা হয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণআন্দোলনের যৌক্তিকতা এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রগঠনের রূপরেখা।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের একদলীয় ও দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া গণআন্দোলনই শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের পথে বাধ্য করে। এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ১০৬ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ঘোষণাপত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বীকৃতি, লক্ষ্য, এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে গঠিত হয়েছে, এবং শিগগিরই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করাই তাদের প্রধান কাজ।
এছাড়া এই সরকার রাষ্ট্রকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরত নেওয়ার অঙ্গীকার করে। জনগণের মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথাও ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
এটি সংবিধানের একটি পরিপূরক দলিল হিসেবে ভবিষ্যৎ সংসদে তফসিলভুক্ত করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ঘোষণাপত্রের মূল দিকগুলো:
১. রাষ্ট্র পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনরায় প্রতিষ্ঠা:
বাংলাদেশকে তার ১৯৭১-এর আদর্শ ও ১৯৭২ সালের সংবিধানের ভিত্তিতে ফেরত নেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে।
২. ফ্যাসিবাদ ও একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান:
শেখ হাসিনা সরকারের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের কঠোর সমালোচনা করে জনগণকে তা থেকে মুক্ত করার সংগ্রামের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
৩. গণভবনমুখী আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন:
৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং সরকার পতন ঘটে।
৪. সুপ্রিম কোর্টের ব্যাখ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন:
৮ আগস্ট ২০২৪-এ সুপ্রিম কোর্টের ১০৬ অনুচ্ছেদের আলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বে।
৫. এই সরকার গঠনের বৈধতা গণআন্দোলন ও সংবিধান থেকে প্রাপ্ত:
জনগণের ইচ্ছা ও সাংবিধানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই সরকারকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
৬. গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার:
২০২৪ সালের আন্দোলনকে চূড়ান্ত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
৭. শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করা হবে:
ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করা হবে।
৮. আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পুনর্বাসন:
আহতদের চিকিৎসা, পরিবারকে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি।
৯. ব্যাপক সংস্কার ও জবাবদিহিমূলক শাসনের প্রতিশ্রুতি:
দুর্নীতি, দমন-পীড়নের অবসান ঘটিয়ে জনগণের প্রতি জবাবদিহিমূলক শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে।
১০. মতপ্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে:
গণমাধ্যম, মতপ্রকাশ ও সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা আইনি সুরক্ষা পাবে।
১১. অবাধ, গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি: