ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদারের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ার প্রভাবকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে মালয়েশিয়া। এই সুযোগকে ব্যবহার করে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে চায় ঢাকা।

মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা বারনামাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। বিশেষ ওই সাক্ষাৎকারটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে বারনামা।

সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়া পুরো আলোচনায় তাদের প্রভাব খাটাবে; যাতে আমরা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারি। সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সরকারি সৈন্যদের মাঝে চলমান সংঘর্ষ রোহিঙ্গা সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। এর ফলে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।

ড. ইউনূস জানান, কেবল গত ১৮ মাসেই নতুন করে ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছেন। এর সঙ্গে আগে থেকেই পালিয়ে আসা ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আছেন। ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। আরও ভয়াবহ হলো, যুক্তরাষ্ট্র তাদের (রোহিঙ্গাদের) তহবিল পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য বিশাল সমস্যা।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে আগামী কয়েক মাসে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। প্রথম সম্মেলনটি বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেওয়ার আট বছর পূর্তির সময় চলতি মাসের শেষের দিকে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে। আর তৃতীয়টি বছরের শেষের দিকে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সাল থেকে মিয়ানমারে চলমান সশস্ত্র সংঘাত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে। রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তাহীনতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জাতিগত বৈষম্য রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাধা সৃষ্টি করছে।

এই দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট কেবল বাংলাদেশ নয়; বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ—বিশেষ করে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া—তেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সমুদ্রপথে অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানবপাচার এবং শরণার্থী সংকট এসব দেশগুলোর জন্যও উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যদিও মালয়েশিয়া ১৯৫১ সালের জাতিসংঘের শরণার্থী সনদ বা ১৯৬৭ সালের প্রটোকলে স্বাক্ষরকারী নয়, তবুও মানবিক বিবেচনায় দেশটি প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়ে আসছে।

রোহিঙ্গা সংকটের সূচনা হয় ২০১৭ সালে, যখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নমূলক অভিযানের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে কক্সবাজার ও ভাসানচরে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রত্যাবাসন দীর্ঘদিন ধরে থমকে আছে।

সূত্র: বারনামা

রোহিঙ্গা সংকট,মালয়েশিয়া,বাংলাদেশ,আসিয়ান,মিয়ানমার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত