
কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানীতে হোটেল বে-ওয়াচ মিলনায়তনে রোববার (২৪ আগস্ট) থেকে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক তিনদিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক দুর্দশা, প্রত্যাবাসন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা। সেই গণহত্যা ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির দিনটিকে সামনে রেখে এ আয়োজনকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। সম্মেলনের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি, নির্যাতনের বিচার নিশ্চিতকরণ এবং সংকটের টেকসই সমাধান খোঁজা।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার (২৫ আগস্ট) সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভাষণ দেবেন। তিনি সমাপনী দিন ২৬ আগস্টও বিভিন্ন সেশনে অংশ নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বক্তব্য রাখবেন। রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সরাসরি আন্তর্জাতিক মহলের সামনে নিজেদের অভিজ্ঞতা, দাবি ও প্রত্যাশা তুলে ধরার সুযোগ করে দিতেই এ আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, “রোহিঙ্গা সংকটকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এই সমস্যা যেন আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে, সেজন্য ধারাবাহিকভাবে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
এর অংশ হিসেবে কক্সবাজারে চলমান এ সম্মেলনের পর আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে আরও বৃহৎ আয়োজন হবে, যেখানে ১৭০টি দেশ অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরবর্তী সম্মেলন হবে কাতারের দোহায়।
এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ রেপোর্টিয়ার থমাস এনড্রোস, রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি ইমরান, জাতিসংঘে মালয়েশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি এবং ঢাকায় নিযুক্ত অন্তত ১০ জন রাষ্ট্রদূত।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, “রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতেই এই আয়োজন। সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।”
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমানও একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, “বাংলাদেশ এককভাবে চাইলে প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। তবে প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।”
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাখাইনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনকে জটিল করে তুলেছে। তার ওপর অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদও প্রায় শেষের পথে। ফলে এ উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, সরকারের সর্বোচ্চ মহলের দৃঢ় প্রচেষ্টা পরিস্থিতিকে নতুন মোড় দিতে পারে বলেই আশা করা হচ্ছে।
সম্মেলনকে ঘিরে কক্সবাজারে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের কঠোর নজরদারিতে পুরো এলাকা নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।