অনলাইন সংস্করণ
১৯:২৬, ২৪ আগস্ট, ২০২৫
প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের জন্য (বেসামরিক কর্মকর্তা/কর্মচারি ব্যতীত) সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটি- ২০২৫ নামের একটি বেতন কমিটি গঠনের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার (২৪ আগস্ট) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রীত হয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যবৃন্দের জন্য (বেসামরিক কর্মকর্তা/কর্মচারী ব্যতীত) নিম্নরূপভাবে ‘সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটি ২০২৫’ নামে একটি বেতন কমিটি গঠনের জন্য অনুমোদন প্রদান করেছেন।
কমিটি
কমিটির সভাপতি করা হয়েছে লে. জেনারেল মো. ফয়জুর রহমানকে।
সদস্যরা হলেন ১. মেজর জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ, ২. রিয়ার এডমিরাল মো. জহির উদ্দিন, ৩. এয়ার ভাইস মার্শাল রুসাদ দীন আছাদ, ৪. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং চ ছা মং, ৫. এয়ার কমডোর জামিল উদ্দিন আহম্মদ, ৬. মিলিয়া শারমিন, যুগ্ম সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও ৭. ক্যাপ্টেন মো. তৌহিদ সাগর।
সদস্য সচিব করা হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নিশাদুল ইসলাম খানকে।
কমিটির কার্যপরিধি
ক. কমিটি সশস্ত্র বাহিনীর আওতাভুক্ত (বেসামরিক কর্মকর্তা/কর্মচারী ব্যতীত) সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের (এমওডিসি এবং ধর্মীয় পরামর্শদানকারী কর্মকর্তাসহ) বর্তমান বেতন-ভাতা, অবসরভাতা ও পারিবারিক অবসরভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি পর্যালোচনা করে নিম্নক্ত বিষয়ে সুপারিশমালা প্রণয়ন করবে:
(১) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি সময়োপযোগী ও যথোপযুক্ত বেতন কাঠামো নির্ধারণ।
(২) বিশেষায়িত (Specialised) চাকরিধারীদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ।
(৩) বেতন-ভাতার ওপর আরোপযোগ্য কর (আয়কর) জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ কর্তৃক সরাসরি পরিশোধ করার ক্ষেত্রে বেতন কাঠামো স্থিরীকরণ।
(৪) বেতন-বহির্ভূত অন্যান্য সুবিধাদি, যেমন- বাড়ি ভাড়া/চিকিৎসা/যাতায়াত / আপ্যায়ন / প্রেষণ/কার্যভার /মহার্ঘ /উৎসব এবং শ্রান্তিবিনোদন ইত্যাদি ভাতা নিরূপণ।
(৫) মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সমন্বয়ের পদ্ধতি নিরূপণ।
(৬) যথোপযুক্ত সময়োপযোগী পেনশনসহ অবসর সুবিধাদি নির্ধারণ।
(৭) কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের কাজের মান নিরূপণ/মূল্যায়নপূর্বক বেতন-ভাতা কাঠামোয় প্রতিফলন।
(৮) সরাসরি সেবা (টেলিফোন, গাড়ি, মোবাইল ফোন ইত্যাদি) সংক্রান্ত প্রাধিকারসমূহ আর্থিক সুবিধায় নগদায়ন এবং রেশন সুবিধা যৌক্তিকীকরণ।
(৯) উচ্চতর গ্রেড ও ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্তিতে বেতনক্রম নিরীক্ষাক্রমে কোনো অসংগতি পরিলক্ষিত হলে তা দূরীকরণের সুপারিশ প্রণয়ন।
(১০) বেতনক্রমের বিদ্যমান অসংগতি পুনঃপরীক্ষাপূর্বক বাহিনীসমূহের মধ্যে বিরাজমান বেতন-ভাতার বৈষম্য (যদি থাকে) দূরীকরণ।
কমিটি বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে জীবনবেগী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরির বিষয়ে যেসব সুপারিশমালা প্রণয়ন করবে:
(১) পদমর্যাদা ও পদবিন্যাস নির্ধারণ।
(২) বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট গুচ্ছভুক্ত করার পদ্ধতি নিরূপণ।
(৩) উচ্চতর স্তরে পদায়ন করতে গিয়ে প্রতিযোগিতার সুযোগ নির্ধারণ।
(৪) জীবনবেগী চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতার গুরুত্ব নিরূপণ ।
কমিটি সুপারিশ প্রণয়নকালে যেসব বিষয়সমূহ বিবেচনা করবে:
(১) পিতা-মাতাসহ অনূর্ধ্ব ছয় জনের একটি পরিবারের জীবন-যাত্রার ব্যয়।
(২) অনূর্ধ্ব দুই সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়।
(৩) দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সরকারের সম্পদ পরিস্থিতি, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সম্পদের প্রয়োজনীয়তা।
(৪) সংশ্লিষ্ট সংস্থা/প্রতিষ্ঠানসমূহের আয়-ব্যয়ের অবস্থা।
(৫) দারিদ্র্য নিরসনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সম্পদ যোগান ক্রমান্বয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের উপায়।
(৬) মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ।
(৭) কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের দক্ষতা ও কর্মোদ্যোগ বৃদ্ধি করে সেবার মান উন্নয়ন।
(৮) দেশের মৌলিক নীতিমালার সাথে প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিশেষ সম্পর্ক।
(৯) জীবন যাত্রার ব্যয়ভার ও মান।
(১০) জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫ এর প্রস্তাবিত ছেলের সাথে ভারসাম্য রক্ষা।
(১১) মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা আকৃষ্ট করার প্রয়োজনীয়তা।
(১২) সশস্ত্র বাহিনীর অতীত কীর্তি ও ভাবমূর্তি।
(১৩) শান্তি ও যুদ্ধকালে দেশ ও জাতির প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
(১৪) প্রশিক্ষণ ও চাকরিকালে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিপদ সংকুল অবস্থা, কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগী জীবন।
(১৫) পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন থেকে জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময় চাকরিতে ব্যয়।
(১৬) চাকরি জীবনে শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার আদর্শমান বজায় রাখা।
(১৭) দায়িত্ব কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করাণার্থে সার্বক্ষণিক (২৪ ঘণ্টা) প্রস্তুত থাকা।
(১৮) তুলনামূলক কম দীর্ঘ চাকরির দরুন অল্প বয়সে চাকরি হতে অবসর গ্রহণ।
(১৯) যুদ্ধাবস্থা ছাড়াও যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা মোকাবেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্তব্য পালন।
কমিটি সুপারিশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে নিজস্ব নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করবে। প্রয়োজনবোধে দেশের যেকোনো সংস্থার কাছে যে কোনো তথ্য চাইতে পারবে এবং যে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার সহায়তা নিতে পারবে।
এছাড়া কমিটি প্রয়োজনবোধে তিন বাহিনীর জন্য পৃথক পৃথক তিনটি সাব-কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশ বিবেচনা করতে পারবে এবং সশস্ত্র বাহিনীর যেকোনো সদস্যকে প্রয়োজনে এই কমিটি/সাব-কমিটির সাথে সংযোজন করতে পারবে।
অর্থ বিভাগ এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫ এর সাথে সমন্বয় এবং নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করবে। কমিটি তাদের সুপারিশ পুস্তক আকারে ২৫ কপি এ বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে পেশ করবে।