অনলাইন সংস্করণ
২৩:৩১, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
বিশ্ববাসীর চোখের সামনে গাজায় পরিচালিত বর্বর গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার পর বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্বের বিবেকবান নাগরিকদের পক্ষ থেকে আমি আবারও জোরালো দাবি জানাচ্ছি যে, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, শুধুমাত্র ১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমারেখার ভিত্তিতে, যেখানে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকবে, তখনই ন্যায়বিচার সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হবে।
গাজায় পরিচালিত বর্বর গণহত্যার কঠোর সমালোচনা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি সতর্ক করে বলছি, চরম জাতীয়তাবাদ, অন্যের ক্ষতি হয়, এমন ভূরাজনীতি এবং অন্যের ভোগান্তিতে উদাসীনতা বহু দশকে আমরা যা অর্জন করেছিলাম তা ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর সবচেয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য আমরা দেখেছি গাজায়।
তিনি বলেন, শিশুরা না খেতে পেরে অকাল মৃত্যুবরণ করছে। বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। হাসপাতাল-স্কুলসহ গোটা জনপদ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে।
গণহত্যা বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে না উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত দলের সঙ্গে আমরাও একমত, যে আমাদের চোখের সামনেই একটি বর্বর গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে মানবজাতির পক্ষ থেকে এই গণহত্যা বন্ধে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারিনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের একটি শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে- যেখানে সর্বস্তরে সহনশীলতা, অহিংসা, সংলাপ ও সহযোগিতার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করা হবে। গত সাড়ে তিন দশক ধরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্যতম শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে আমাদের অংশগ্রহণ, বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি আমাদের নিরবচ্ছিন্ন অঙ্গীকারের এক বাস্তব প্রমাণ। এমনকি এই মুহূর্তে প্রায় ৬ হাজার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বিশ্বের সবচেয়ে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে জাতিসংঘের আওতায় দায়িত্ব পালন করছেন এবং আজ পর্যন্ত মোট ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী তাদের দায়িত্বপালনকালে শহীদ হয়েছেন।তিনি বলেন, একাধিক গবেষণায় একথা বার বার প্রমাণিত হয়েছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম অন্য যেকোনও একপাক্ষিক শান্তিরক্ষা উদ্যোগের তুলনায় অধিক টেকসই ও কার্যকর। তাই, বিশ্বের শান্তি রক্ষাকারী এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা ও কার্যকারিতা রক্ষায়- আমরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানের জন্য স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত ম্যান্ডেট এবং পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করবার দাবি জানাই।